বেসবলে ‘হিট’ বা আগ্রাসী মনোভাব: খেলোয়াড়দের মানসিকতা ও খেলার ধরনে পরিবর্তন।
ক্রীড়া বিশ্বে, বিশেষ করে বেসবলের জগতে, খেলোয়াড়দের মাঠে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেওয়ার মানসিকতাকে ‘হিট’ বা আগ্রাসী মনোভাব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মানসিকতা খেলোয়াড়দের খেলাটিকে আরও উপভোগ্য করে তোলে এবং দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খেলোয়াড়দের ‘হিট’ দেখানোর ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। পুরনো দিনের খেলোয়াড় এবং বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে এই বিষয়ে রয়েছে ভিন্নমত।
যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বেসবলে ‘হিট’-এর ধারণা নিয়ে আলোচনা। অতীতে, খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সবসময় শতভাগ নিবেদন আশা করা হতো।
এমনকি অনেক সময় ১১০ শতাংশ দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হতো। সম্প্রতি, কয়েকজন খেলোয়াড় মনে করেন, মাঠে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জন্য সবসময় শতভাগ নিবেদিত না হয়ে ৭০ শতাংশ দিলেও ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, নিউ ইয়র্ক ইয়ানকেজের খেলোয়াড় জ্যাজ চিশোলম জুনিয়রের (Jazz Chisholm Jr.) কথা বলা যায়। তিনি মনে করেন, ৭০ শতাংশ চেষ্টা করলে খেলোয়াড়েরা সুস্থ থাকতে পারে এবং ভালো পারফর্ম করতে পারে।
তবে, বেসবলের ইতিহাসে ‘হিট’-এর ধারণা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ‘হিট’-এর ওপর ভিত্তি করে খেলোয়াড়দের বিভিন্ন খেতাব দেওয়া হয়।
যেমন – ‘হার্ট অ্যান্ড হিট’ অ্যাওয়ার্ড। খেলোয়াড়দের মধ্যে এই আগ্রাসী মনোভাব সবসময় দেখা যায় না।
উদাহরণস্বরূপ, নিউইয়র্ক মেটসের (New York Mets) তারকা জুয়ান সোটো (Juan Soto) একটি ম্যাচে দ্বিতীয় বেসে দ্রুত দৌড়াননি।
পুরনো দিনের খেলোয়াড় এবং প্রশিক্ষকদের মতে, ‘হিট’ দেখানোটা আপোষহীন একটা বিষয়। তাদের মতে, খেলোয়াড়দের মধ্যে এই মানসিকতার অভাব থাকলে তা শুধু সতীর্থদের কাছেই খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে না, বরং কোচের অসন্তুষ্টির কারণও হয়।
লস অ্যাঞ্জেলেস অ্যাঞ্জেলসের বর্তমান ম্যানেজার এবং সত্তরের দশকের একজন খেলোয়াড়, ৭৮ বছর বয়সী রন ওয়াশিংটন (Ron Washington) মনে করেন, খেলোয়াড়দের সবসময় শতভাগ নিবেদন দিতে হবে।
আপনি হয়তো ৭০ শতাংশ দিচ্ছেন, কিন্তু অন্যদের বুঝতে দেওয়া উচিত নয় যে আপনি ৭০ শতাংশ দিচ্ছেন।
বেসবলের ইতিহাসে ‘হিট’-এর সংজ্ঞা সবসময় একরকম ছিল না। পুরনো দিনের খেলোয়াড়দের মধ্যে এর সংজ্ঞা ছিল, দ্রুত, আক্রমণাত্মক এবং সতর্কতার সঙ্গে খেলা।
তবে বর্তমান প্রজন্মের খেলোয়াড়দের মধ্যে এই ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। আটলান্টা ব্রাভসের (Atlanta Braves) তারকা রোনাল্ড অ্যাকুনা জুনিয়র (Ronald Acuña Jr.) একবার খেলোয়াড়দের ‘হিট’-এর অভাব নিয়ে ম্যানেজারের সমালোচনা করেছিলেন।
অন্যদিকে, অ্যারিজোনা ডায়মন্ডব্যাকসের (Arizona Diamondbacks) ম্যানেজার টোরে লোভালো (Torey Lovullo) মনে করেন, খেলোয়াড়দের শারীরিক অবস্থা বুঝে মাঠে নিজেদের সেরাটা দেওয়া উচিত।
উদাহরণস্বরূপ, তিনি তারকা আউটফিল্ডার করবিন ক্যারোলের (Corbin Carroll) কথা উল্লেখ করেন, যিনি একটি ম্যাচে হ্যামস্ট্রিংয়ে (hamstring) সামান্য আঘাত পাওয়া সত্ত্বেও দলের জন্য খেলেছিলেন।
তবে, খেলোয়াড়দের এই মানসিকতার সঙ্গে অনেকে একমত নন।
অনেকের মতে, ‘হিট’ বা আগ্রাসী মনোভাব সহজে বাড়ানো বা কমানো যায় না। তাদের মতে, একজন খেলোয়াড়কে মাঠে ১০০ শতাংশ দিতেই হবে।
বেসবলের এই পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে, ‘হিট’ এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে।
তবে খেলোয়াড়দের মানসিকতা, শারীরিক অবস্থা এবং আধুনিক প্রশিক্ষণের কারণে, এই ধারণায় পরিবর্তন এসেছে এবং এর সংজ্ঞা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস