মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা শুনতে রাজি হয়নি, যেখানে এক শিক্ষার্থীর টি-শার্ট পরাকে কেন্দ্র করে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছিল ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের একটি স্কুলে, যেখানে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র লিয়াম মরিসন “লিঙ্গ দুটিই” (“there are only two genders”) উল্লেখ করা একটি টি-শার্ট পরে স্কুলে গিয়েছিল।
স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রথমে তাকে টি-শার্টটি খুলতে বলে, কারণ তাদের মতে এটি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে যারা নিজেদের লিঙ্গপরিচয় নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে, তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। লিয়াম রাজি না হওয়ায় তাকে সেদিন স্কুল থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর কয়েক সপ্তাহ পরে, সে একই টি-শার্ট পরে “censored” শব্দটি লিখে স্কুলে আসে, যা তার প্রতিবাদ হিসেবে দেখা যায়।
এরপরে, লিয়াম এবং তার পরিবার স্কুলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যায়। তারা যুক্তি দেখান যে, এটি তাদের প্রথম সংশোধনী অধিকার লঙ্ঘন করেছে, যা মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়। তবে, নিম্ন আদালত এবং পরে আপিল আদালত স্কুলের পক্ষেই রায় দেয়। আদালত জানায়, স্কুলের পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে।
এই মামলার রায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে ভিন্নমত দেখা যায়। বিচারপতি স্যামুয়েল আলিতো এবং ক্লারেন্স থমাস এই মামলাটি গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বিচারপতি আলিতো তার আপত্তির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, এই রায়ের ফলে “হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের প্রথম সংশোধনী অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।”
আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে, শিক্ষার্থীদের পোশাক পরিধানের স্বাধীনতা এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা রক্ষার মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এই মামলায়, আদালত ১৯৬৯ সালের একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার (Tinker বনাম Des Moines) প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের স্কুলে মত প্রকাশের অধিকারের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে, সেই রায়েও বলা হয়েছিল, যদি কোনো বক্তব্য স্কুলের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করে, তাহলে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তের সমর্থনে জানায়, তারা এমন শিক্ষার্থীদের বিষয়ে অবগত, যারা তাদের লিঙ্গপরিচয় নিয়ে অন্যদের দ্বারা খারাপ আচরণের শিকার হয়েছে এবং এর কারণে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক জটিলতায় পড়েছে। তাই, তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ বজায় রাখতে চায়। এই ঘটনার মাধ্যমে, শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং স্কুলের দায়িত্ব—উভয় দিকই বিশেষভাবে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।