বিশাল সমুদ্র পাড়ি দেওয়া একটি হাঙরের গল্প, যা বিজ্ঞানীদেরও চমকে দিয়েছে। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা আট ফুট লম্বা একটি স্ত্রী ষাঁড় হাঙরের সন্ধান পেয়েছেন, যে কিনা প্রায় ৭,২৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে, যা আগে কোনো হাঙরের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।
এই হাঙরটি ভারত মহাসাগরের মোজাম্বিক চ্যানেল থেকে যাত্রা শুরু করে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে নাইজেরিয়ার কাছে গিয়ে পৌঁছায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পরিবেশের পরিবর্তন হওয়ায় এমনটা ঘটছে।
গভীর সমুদ্রে এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার ঘটনাটি ঘটিয়েছে, ঘানার এক মৎস্যজীবীর জালে ধরা পড়া একটি হাঙর। গত বছর গ্রীষ্মকালে, ঘানার ক্যাপ্টেন তুরাওয়া হাকিম নাইজেরিয়ার লাগোসের কাছে মাছ ধরতে গিয়ে এই হাঙরটি ধরেন।
প্রথমে তিনি বিষয়টি বুঝতে পারেননি, কিন্তু হাঙরটিকে কাটার সময় এর পেটে একটি কালো সিলিন্ডার আকারের বস্তু দেখতে পান, যেখানে লেখা ছিল, ‘গবেষণা: ফেরত দিলে পুরষ্কার’। কৌতুহলী হয়ে হাকিম সেই নম্বরে ই-মেইল করেন এবং যোগাযোগ করেন ওশেনোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (Oceanographic Research Institute) গবেষক রায়ান ডালির সঙ্গে।
ডালি জানান, এই হাঙরটিকে ২০২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
ডালির কাছেও প্রথমে বিষয়টি অবিশ্বাস্য লেগেছিল। তিনি জানান, “এমনটা ঘটার সম্ভাবনা ছিল প্রায় এক মিলিয়নে এক ভাগ।” এই হাঙরটির সমুদ্রযাত্রা নতুন কিছু ধারণা দিয়েছে, যা আগে বিজ্ঞানীদের অজানা ছিল।
এই হাঙরটির যাত্রাপথ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এটি বঙ্গুয়েলা স্রোতকে এড়িয়ে গিয়েছিল। বঙ্গুয়েলা স্রোত হলো দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়ার পশ্চিম উপকূল ধরে বয়ে যাওয়া একটি শীতল স্রোত, যা সাধারণত এই অঞ্চলের হাঙরদের জন্য একটি বাধা তৈরি করে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, হাঙরটি হয়তো এই শীতল স্রোত এড়িয়ে উষ্ণ পানির এলাকা দিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করেছে।
এই ঘটনার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ছে এবং এর ফলে অনেক সামুদ্রিক প্রাণী তাদের আবাস পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে।
ডালি মনে করেন, “সমুদ্রে উষ্ণতা বাড়লে অনেক সময় ঠান্ডা স্রোতের সৃষ্টি হতে পারে, যা সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।”
তবে, এই ঘটনার অন্য একটি দিকও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, হাঙরের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার ঘটনা তাদের প্রজনন এবং বিচরণ ক্ষেত্র সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারে।
গবেষকরা মনে করেন, হয়তো কোনো কারণে এই হাঙরটি নতুন পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিল।
বর্তমানে বিশ্বে মাছ ধরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, যেখানে মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে মৎস্য শিকারের সম্পর্ক গভীর।
নাইজেরিয়ার মতো দেশে, যেখানে মানুষের জীবন ধারণের জন্য মাছের উপর নির্ভরতা অনেক বেশি, সেখানে হাঙর শিকার একটি উদ্বেগের বিষয়। ডালি মনে করেন, “যদি আমরা হাঙর এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীদের বাঁচাতে চাই, তবে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে সহযোগিতা করা জরুরি।”
এই গবেষণা ভবিষ্যতে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক