**ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা চেয়ে বার্লিনে জেলেনস্কি, শান্তি আলোচনার প্রস্তাব**
ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জার্মানির কাছ থেকে আরও সামরিক সহায়তা চেয়েছেন। এই লক্ষ্যে তিনি বুধবার বার্লিনে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি রাশিয়া ইউক্রেনে বোমা হামলা জোরদার করেছে। এমন পরিস্থিতিতে জেলেনস্কির এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বৈঠকে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখা এবং বিশেষ করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জার্মানি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্যকারী দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
চ্যান্সেলর মের্ৎস জার্মানির ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই যুদ্ধ বন্ধ এবং ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা সমর্থন অটুট রাখার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আলোচনায় উঠে আসে শান্তি আলোচনার বিষয়ও। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি শীর্ষ পর্যায়ে শান্তি আলোচনা করতে প্রস্তুত আছেন।
এই আলোচনায় তিনি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এক টেবিলে দেখতে চান। তিনি বলেন, ‘আমরা শীর্ষ পর্যায়ে নেতাদের সঙ্গে বসতে রাজি আছি। আমেরিকান এবং রুশ উভয় পক্ষই এটা জানে।’
জার্মান চ্যান্সেলর মের্ৎস জানিয়েছেন, জার্মানি এবং অন্যান্য মিত্র দেশগুলো ইউক্রেনকে সরবরাহ করা অস্ত্রের ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে। এর ফলে ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে।
তবে জার্মানি তাদের সরবরাহ করা অস্ত্রের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
জানা গেছে, ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ এখন রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত হানতে সক্ষম এমন ক্ষেপণাস্ত্র চাইছে। এর মধ্যে রয়েছে জার্মানির তৈরি ‘টোরাস’ ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ৫০০ কিলোমিটার।
এটি স্টিলথ প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি, যা ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানতে সক্ষম। জেলেনস্কি জানান, তিনি মের্ৎজের সঙ্গে বৈঠকে দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহ এবং সেগুলোর ব্যবহার নিয়েও আলোচনা করেছেন।
এদিকে, ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন। জেলেনস্কি জানান, রাশিয়া প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০টি ড্রোন তৈরি করছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনে রাশিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে এই অর্থ সহায়তা প্রয়োজন।
যুদ্ধ পরিস্থিতির আরও কিছু খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার জুড়ে এখনো তীব্র লড়াই চলছে। উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে গভীর হামলা চালাচ্ছে।
সম্প্রতি রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তাদের বৃহত্তম ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার রাতে এবং বুধবার ভোরে ১৩টি অঞ্চলে ইউক্রেনের ২৯৬টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
এর জবাবে ইউক্রেনও তাদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়াচ্ছে। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেন চায় ইউরোপীয় দেশগুলো যেন তাদের আক্রমণাত্মক ড্রোন, বিমান প্রতিরক্ষা ইন্টারসেপ্টর, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ব্যালিস্টিক সিস্টেম তৈরিতে সহায়তা করে।
এছাড়াও, মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন জানিয়েছেন, রাজধানী অভিমুখে আসা ৩৩টি ড্রোনকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে।
মস্কো অঞ্চলের গভর্নর আন্দ্রেই ভোরোবিয়ভ জানিয়েছেন, ৪২টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। ড্রোন ধ্বংসাবশেষের কারণে তিনটি আবাসিক ভবনের ক্ষতি হয়েছে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
এই ঘটনার জেরে মস্কোর বিমানবন্দরগুলোতে কয়েকশ’ ফ্লাইট বিলম্বিত বা বাতিল করা হয়।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, বুধবার ভোরে রাশিয়ার বাহিনী ৫টি ‘ইস্কান্দার’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, একটি গাইডেড বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৮৮টি ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো এর মধ্যে ৩৪টি ড্রোন ভূপাতিত এবং ৩৭টি ড্রোন অকার্যকর করতে সক্ষম হয়েছে।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় রেলওয়ে কোম্পানি ‘ইউক্রজালিসনিৎসিয়া’ জানিয়েছে, খারকিভ, দোনেৎস্ক এবং সুমি অঞ্চলের রেল অবকাঠামো এবং সরঞ্জামের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
খারকিভ অঞ্চলে রেলপথে একটি ড্রোন বিধ্বস্ত হওয়ায় সাময়িকভাবে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস