প্লাস্টিক দূষণ: বিশ্বজুড়ে এক গভীর সংকট। বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ দূষণের এক অন্যতম প্রধান কারণ হলো প্লাস্টিক।
দিন দিন এর উৎপাদন বাড়ছে, আর সেই সাথে বাড়ছে এর ব্যবহার। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রীর আধিক্য এই দূষণকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে, যেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক ব্যবস্থা নেই, সেখানে প্লাস্টিক দূষণ মারাত্মক রূপ নিয়েছে। তবে উন্নত বিশ্বেও, যেখানে পুনর্ব্যবহারের হার কম, সেখানেও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমস্যা দেখা যায়।
প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার মানুষের জীবনকে সহজ করেছে, সন্দেহ নেই। হালকা ও টেকসই হওয়ায় পরিবহন থেকে শুরু করে চিকিৎসা—সব ক্ষেত্রেই এর জুড়ি মেলা ভার।
কিন্তু এই সুবিধার আড়ালে লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর দিক। বর্তমানে উৎপাদিত প্লাস্টিকের প্রায় ৪০ শতাংশই একবার ব্যবহারযোগ্য।
প্লাস্টিকের ব্যাগ বা খাবারের মোড়কের মতো এই জিনিসগুলো কয়েক মিনিটের জন্য ব্যবহৃত হলেও পরিবেশের সঙ্গে মিশে থাকে শত শত বছর ধরে।
প্লাস্টিক বর্জ্যের এই ব্যাপকতা কমাতে বিভিন্ন দেশ পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। সম্প্রতি, ২০২৬ সালের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে সব ধরনের প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করার আইন পাস হয়েছে।
প্লাস্টিক দূষণের কারণ ও প্রভাব।
প্লাস্টিক দূষণ মূলত আসে স্থলভাগ থেকে। নদ-নদীগুলো এই বর্জ্য বহন করে সমুদ্রে নিয়ে যায়।
একবার সমুদ্রে পৌঁছালে, প্লাস্টিক ঢেউয়ের টানে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে।
সমুদ্রে থাকা প্লাস্টিক ধীরে ধীরে ক্ষুদ্র কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। এই মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো পরিবেশের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ছে—যেমন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট থেকে শুরু করে গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চ পর্যন্ত।
এমনকি, এগুলো মানুষের শরীরেও প্রবেশ করছে। বিজ্ঞানীরা মানুষের রক্ত, ফুসফুস এবং মলের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছেন।
প্লাস্টিক দূষণের কারণে বন্যপ্রাণী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতি বছর, প্লাস্টিকের কারণে হাজার হাজার পাখি, মাছ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী মারা যায়।
প্রায় ২,১০০ প্রজাতির প্রাণী—যেগুলো বিলুপ্তির পথে, তাদের জীবনেও প্লাস্টিকের প্রভাব পড়েছে।
অনেক প্রাণী, যেমন কচ্ছপ, তিমি—প্লাস্টিকের জালে আটকা পড়ে মারা যায়। এছাড়া, মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণের ফলে তাদের খাদ্যনালীতে বা অঙ্গে গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়, যা তাদের মৃত্যুর কারণ হয়।
প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের উপায়।
সমুদ্রে একবার প্লাস্টিক গেলে তা পুনরুদ্ধার করা কঠিন। উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পুনর্ব্যবহারের বৃদ্ধি, উন্নত পণ্য নকশা এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উৎপাদন কমানোর মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণের চিত্র।
বাংলাদেশেও প্লাস্টিক দূষণ একটি গুরুতর সমস্যা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
বুড়িগঙ্গা ও অন্যান্য নদ-নদীতে প্লাস্টিকের দূষণ একটি নিয়মিত দৃশ্য।
উপসংহার।
প্লাস্টিক দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যা সমাধানে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
ব্যক্তিগত সচেতনতা বৃদ্ধি, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটিয়ে আমরা আমাদের পরিবেশকে বাঁচাতে পারি।
আসুন, আমরা সবাই প্লাস্টিক দূষণ রোধে সচেতন হই এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ি।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক