জার্মানির কাছ থেকে দীর্ঘ পাল্লার অস্ত্র এবং সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বুধবার বার্লিনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ইউক্রেনের জন্য প্রায় ৫ বিলিয়ন ইউরোর (বর্তমান বাজার অনুযায়ী প্রায় ৬০০০০ কোটি টাকার বেশি) সামরিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।
তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী জার্মানি এখনো কিয়েভকে তাদের অত্যাধুনিক টরাস ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে রাজি হয়নি।
সামরিক সহায়তা প্যাকেজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, জার্মানির অর্থায়নে ইউক্রেনে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যৌথভাবে তৈরি করা হবে। এর ফলে ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানতে পারবে।
এছাড়াও, এই প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আরও অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, গোলাবারুদ, সামরিক সরঞ্জাম এবং চিকিৎসা সহায়তা।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠকের পর দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, জার্মানি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা আরও বৃদ্ধি করবে, যাতে দেশটি রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।
শোলজ এই সামরিক সহযোগিতাকে দুই দেশের মধ্যে “নতুন সামরিক-শিল্প সহযোগিতার সূচনা” হিসেবে উল্লেখ করেন।
তবে, জার্মানির পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত টরাস ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসেনি। বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল, সম্মেলনে হয়তো এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
টরাস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ইউক্রেনকে ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো এবং আমেরিকান-নির্মিত ATACAM ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে অনেক দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সহায়তা করবে।
জার্মান সরকারের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, জার্মানির এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণভাবে “দায়িত্বজ্ঞানহীন”।
তিনি অভিযোগ করেন, জার্মানি শান্তির প্রক্রিয়াকে সমর্থন না করে বরং সংঘাতকে আরও উস্কে দিচ্ছে এবং এই সামরিক কার্যকলাপে নিজেদের পরোক্ষভাবে জড়াচ্ছে।
অন্যদিকে, জার্মানির ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে এই বিষয়ে মতানৈক্য দেখা যাচ্ছে। ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেট দলের একজন সদস্য এক টুইট বার্তায় বলেছেন, জোটের মধ্যে ঐক্য এখনো দেখা যাচ্ছে না এবং রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।
সামরিক এবং মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে জার্মানি দীর্ঘদিন ধরেই ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে।
কিয়েল ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, সামরিক সহায়তার দিক থেকে জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রের পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
বৈঠকে জেলেনস্কি এবং শোলজ উভয়ই রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। বিশেষ করে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ১৯ মে হওয়া ফোনালাপের পর রাশিয়ার পক্ষ থেকে একটি সমঝোতা স্মারক দেওয়ার কথা ছিল, যা এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
জার্মান চ্যান্সেলর শোলজ বলেন, “আমি সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
অন্যদিকে, মস্কো সময়ক্ষেপণ করছে। সমঝোতা স্মারক এখনো পর্যন্ত পাঠানো হয়নি।
তথ্য সূত্র: CNN