শিরোনাম: ইতালির দ্বীপে মৌমাছির লড়াই: বন্য মৌমাছির জীবন বাঁচাতে তৎপর কর্তৃপক্ষ
ইতালির একটি ছোট্ট দ্বীপ, জিয়ান্নুত্রি। এই দ্বীপে বন্য মৌমাছি এবং চাষ করা মৌমাছির মধ্যে এক নীরব লড়াই চলে আসছে বহু বছর ধরে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই লড়াইয়ে টিকতে পারছে না বন্য মৌমাছিরা।
মানুষের দ্বারা প্রতিপালিত মৌমাছিদের কারণে তারা খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বেশ বিপাকে পড়ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বন্য মৌমাছিদের টিকিয়ে রাখতে না পারলে দ্বীপের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
গবেষণাটি চালানো হয় ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত। ইতালির এই দ্বীপে প্রতি বছরই মধু সংগ্রহের জন্য চাষের মৌমাছি আনা হতো।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন সেখানকার বন্য মৌমাছিদের ওপর এর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেন, তখন তারা এক ভিন্ন চিত্র দেখতে পান।
গবেষণার প্রধান লরেঞ্জো পাস্কালি (Lorenzo Pasquali), যিনি বর্তমানে পোল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত, জানান, তারা প্রথমে চাষের মৌমাছিদের সরিয়ে নেন এবং দেখেন বন্য মৌমাছিরা কেমন আচরণ করে।
গবেষণায় দেখা যায়, চাষের মৌমাছি সরিয়ে নেওয়ার পর ফুলের রেণু ও মধুর পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে বন্য মৌমাছিরা আগের চেয়ে বেশি সময় ধরে খাবার সংগ্রহ করতে পারে।
এর মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। গবেষকরা জানান, বন্য মৌমাছিরা সাধারণত আকারে বড় এবং উজ্জ্বল রঙের হয়ে থাকে, যা তাদের চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, তারা অন্যান্য মৌমাছিদের থেকে ভিন্ন শব্দ করে ও ওড়ে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যখন চাষের মৌমাছি ছিল, তখন কিছু বিশেষ প্রজাতির বন্য মৌমাছির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়েছিল।
উদাহরণস্বরূপ, ‘অ্যান্থোফোরা ডিস্পার’ (Anthophora dispar) ও ‘বম্বাস টেরেস্ট্রিজ’ (Bombus terrestris) নামক দুটি প্রজাতির মৌমাছি তাদের আগের সংখ্যার তুলনায় প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছিল।
গবেষণার ফল প্রকাশের পর, জিয়ান্নুত্রির জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তারা দ্বীপটিতে মধু চাষ বন্ধ করে দেয়।
এই পদক্ষেপকে বিজ্ঞানীরা স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, কোনো সংরক্ষিত এলাকায়, যেখানে স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীর বসবাস, সেখানে বাইরের কোনো প্রজাতি প্রবেশ করানো উচিত নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু জিয়ান্নুত্রি দ্বীপ নয়, বিশ্বের অনেক স্থানেই বন্য মৌমাছিরা বিভিন্ন হুমকির সম্মুখীন। তাদের আবাসস্থল ধ্বংস, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কীটনাশকের ব্যবহার—এসব কারণে তাদের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে মানুষের সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে চাষের মৌমাছিদের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি কমানো সম্ভব। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, দ্বীপটিতে মধু চাষ বন্ধ করার ফলে বন্য মৌমাছিদের সংখ্যা আবার বাড়বে এবং তারা আগের মতো স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক