ভিডিও গেমের জগৎ এখন আর নিছক বিনোদনের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। উন্নত প্রযুক্তি আর আকর্ষণীয় গল্পের মিশেলে গেমগুলো পৌঁছে গেছে বাস্তবের কাছাকাছি। অনেকেই এখন গেমের জগৎ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বাস্তবে সেই স্থানগুলো ঘুরে দেখতে চান, যেখানে গেমের গল্প তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, অন্তত ৩৫ শতাংশ মার্কিন পর্যটক ভিডিও গেম খেলার পর কোনো গন্তব্যে ভ্রমণে যেতে উৎসাহিত হন। গেমের এই আকর্ষণ থেকেই জন্ম হয়েছে ‘গেম ট্যুরিজম’-এর।
আসুন, আজ এমন কিছু গন্তব্যের কথা জানা যাক, যা জনপ্রিয় ভিডিও গেমগুলোর জন্ম দিয়েছে, আর যা একইসঙ্গে হতে পারে আপনার পরবর্তী ভ্রমণের ঠিকানা।
১. অরল্যান্ডো, যুক্তরাষ্ট্র:
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে তৈরি হয়েছে ‘সুপার নিনটেন্ডো ওয়ার্ল্ড’। এখানে আপনি ‘ইয়োশিস অ্যাডভেঞ্চার’-এর মতো রাইডে চড়তে পারবেন, আবার ‘ডনকি কং’-এর ‘মাইন-কার্ট ম্যাডনেস’-এর মতো আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতাও উপভোগ করতে পারবেন।
এছাড়াও, এখানকার ‘আর্কেড মনস্টারস’-এর মতো জায়গাগুলোতে রয়েছে অসংখ্য পিনবল ও আর্কেড গেম খেলার সুযোগ। গেমের বিজ্ঞান বিষয়ক ধারণা পেতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ‘অরল্যান্ডো সায়েন্স সেন্টার’-এ।
২. টোকিও, জাপান:
গেমিংয়ের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত জাপানের রাজধানী টোকিওর ‘আকিহাবারা’ জেলা। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি স্টোর, বিভিন্ন গেমিং সামগ্রীর দোকান এবং খেলার স্থান।
‘মনস্টার হান্টার্স বার’-এর মেনু থেকে গেমের স্বাদ নিতে পারেন। এছাড়া, ‘পোকিমন সেন্টার মেগা টোকিও’-তে বিরল পোকেমন খুঁজে বের করার সুযোগ তো থাকছেই। একইসঙ্গে, ‘দ্য লিজেন্ড অফ জেলডা: ব্রেথ অফ দ্য ওয়াইল্ড’ এবং ‘টিয়ার্স অফ দ্য কিংডম’-এর মতো গেমগুলোর দৃশ্যের অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় ‘টোকিও ন্যাশনাল মিউজিয়াম’-এর প্রাচীন শিল্পকর্মগুলোতে।
৩. অসলো ও স্টাভাংগার, নরওয়ে:
ভাইকিং যুগের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে নরওয়ের অসলোতে তৈরি হয়েছে ‘দ্য ভাইকিং প্ল্যানেট’। এখানে ভাইকিং জাহাজ এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) অভিজ্ঞতার সুযোগ রয়েছে।
এছাড়াও, ‘অ্যাসাসিন্স creed: ভালhalla’-র অনুপ্রেরণা হিসেবে স্টাভাংগারের ‘জেরনালডারগার্ডেন’-এ আইরন যুগের জীবনযাত্রা দেখতে পারেন। ‘গড অফ ওয়ার: রাগনারক’ গেমের দৃশ্যগুলোর জন্য পরিচিত ‘জোটুনহাইমেন ন্যাশনাল পার্ক’-ও আপনার ভ্রমণ তালিকায় যোগ করতে পারেন।
৪. মন্টানা, যুক্তরাষ্ট্র:
যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানায় অবস্থিত ‘গ্লেসিয়ার ন্যাশনাল পার্ক’, ‘ফার ক্রাই ৫’ এবং ‘ফার ক্রাই: নিউ ডন’-এর মতো গেমগুলোর দৃশ্যের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এছাড়া, ‘আমেরিকান কম্পিউটার অ্যান্ড রোবোটিক্স মিউজিয়াম’-এ ৪,০০০ বছরের পুরনো মানব ইতিহাসের নিদর্শন দেখা যায়।
ছোটদের জন্য ‘লেগো জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ গেমের আদলে তৈরি ‘মন্টানা ডাইনোসর ট্রেইল’ হতে পারে দারুণ এক অভিজ্ঞতা।
৫. লুক্সর, মিশর:
মিশরের লুক্সরে অবস্থিত ‘হ্যাতশেপসুতের মর্তুয়্যারি মন্দির’ ‘অ্যাসাসিন্স creed: অরিজিনস’ গেমের গ্রাফিক্সের জন্য পরিচিত। এখানে প্রাচীন মিশরের একমাত্র নারী ফারাও, ‘গেমিং কুইন’ খ্যাত হ্যাতশেপসুতের সম্মানে তৈরি সেনেট বোর্ড গেমও দেখতে পারবেন।
নীল নদের তীরে অবস্থিত কারনাক মন্দিরও আপনার ভালো লাগতে পারে।
৬. মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া:
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে, ‘ইস্টার্ন মার্কেট মার্ডার’-এর মতো লোকাল গেমগুলো শহরের অলিগলিতে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ করে দেয়। এখানে ‘এসিএমআই’ (অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর দ্য মুভিং ইমেজ)-এ ‘হলো নাইট: সিল্কসং’-এর মতো ভিডিও গেমগুলোর প্রদর্শনী উপভোগ করা যায়।
‘ফোর্ট্রেস’-এর মতো রেস্টুরেন্টগুলোতে বসে গেমিং কনসোলের মাধ্যমে খেলার সুযোগও রয়েছে। এছাড়াও, ‘সি লাইফ অ্যাকুরিয়াম’-এ ‘অ্যানিম্যাল ক্রসিং: নিউ হরাইজনস’-এর মতো গেমের প্রদর্শনী উপভোগ করা যেতে পারে।
৭. প্যারিস, ফ্রান্স:
প্যারিসের রাস্তায় ‘স্পেস ইনভেডার্স’ গেমের আদলে তৈরি আর্ট ও আধুনিক ইতিহাস নিয়ে একটি ওয়াকিং ট্যুর করতে পারেন। এছাড়াও, ‘পোকিমন গো’ উৎসবের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
‘পোকিমন লিজেন্ডস: জেডএ’-এর অনুপ্রেরণা প্যারিসের ‘পার্ক দে সো’-এর বাগানগুলোতে বিরল পোকেমন খুঁজে বেড়ানো যেতে পারে।
৮. লিমা, পেরু:
পেরুর রাজধানী লিমার ‘পার্ক দে লাস লেইেন্ডাস’-এর বোটানিক্যাল গার্ডেনে ‘আনচার্টেড’ গেমের দৃশ্যগুলোর অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। এখানে ‘কানতুতা’ ফুল এবং ইনকা মিথ ও কিংবদন্তীর গল্প শোনা যায়।
‘কাসোনা অফ দ্য ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সান মার্কোস’-এ প্রত্নতত্ত্ব ও নৃতত্ত্ব বিষয়ক জাদুঘরে বিভিন্ন শিল্পকর্ম দেখা যেতে পারে।
ভিডিও গেমের এই জগৎ এখন বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশের ভ্রমণকারীরাও চাইলে এই গন্তব্যগুলোতে ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন।
ভিসা প্রক্রিয়া ও ভ্রমণ খরচ কিছুটা বেশি হলেও, গেমের আকর্ষণ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে অসাধারণ হবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক