মনের চোখে ছবি আঁকা— অনেকের কাছেই অতি স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু এমনও কিছু মানুষ আছেন, যাদের জন্য বিষয়টি মোটেও সহজ নয়। তারা হয়তো চোখ বন্ধ করে একটি আপেল বা পরিচিত কোনো দৃশ্যের কথা ভাবেন, কিন্তু তাদের মনে কোনো ছবিই ভেসে ওঠে না।
এই বিরল পরিস্থিতিটি ‘অ্যাফ্যান্টাসিয়া’ নামে পরিচিত। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে।
অ্যাফ্যান্টাসিয়া মূলত মানসিক চিত্রকল্পনার অভাব। অর্থাৎ, মনের ভেতর কোনো দৃশ্য তৈরি করতে না পারা।
যুক্তরাজ্যের একজন স্নায়ুবিজ্ঞানী অধ্যাপক অ্যাডাম জেম্যান এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি লক্ষ করেছেন, কিছু মানুষের মস্তিষ্কের গঠন অন্যদের থেকে আলাদা হওয়ার কারণে তারা কোনো দৃশ্য কল্পনা করতে পারেন না। আগে যাদের মধ্যে দৃশ্যকল্পনার ক্ষমতা ছিল, কোনো দুর্ঘটনার কারণে সেটি চলে গেলে, তাদের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে অধ্যাপক জেম্যান এমন অনেক মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছেন, যারা জন্ম থেকেই কোনো দৃশ্য কল্পনা করতে পারেন না। তাদের অভিজ্ঞতা জানার পর, তিনি অ্যাফ্যান্টাসিয়া শব্দটি তৈরি করেন। অধ্যাপক জেম্যানের মতে, বিশ্বে সম্ভবত কয়েক মিলিয়ন মানুষের মধ্যে এই সমস্যা রয়েছে।
বৈজ্ঞানিকভাবে অ্যাফ্যান্টাসিয়ার বিষয়টি বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো চোখের তারা পরীক্ষা করা। যখন আমরা সূর্যের দিকে তাকাই, তখন চোখের মণি ছোট হয়ে আসে।
অ্যাফ্যান্টাসিয়ার শিকার ব্যক্তিরা যখন সূর্যের দিকে তাকানোর কথা চিন্তা করেন, তখন তাদের চোখের মনির তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। এছাড়া, মস্তিষ্কের ক্রিয়া নিরীক্ষণের জন্য এমআরআই স্ক্যানও করা হয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স অঞ্চলে তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা অন্যদের থেকে ভিন্ন।
তবে, অ্যাফ্যান্টাসিয়া কোনো রোগ নয়। এটি মস্তিষ্কের ভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের একটি উদাহরণ। মনোবিজ্ঞানী সারা শমস্টেইন মনে করেন, এটি মানুষের উপলব্ধির একটি ভিন্ন রূপ, যা হয়তো বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় এসেছে। অ্যাফ্যান্টাসিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা যে কল্পনাবিহীন, তা কিন্তু নয়।
তারা অন্যভাবে চিন্তা করতে ও ধারণা তৈরি করতে সক্ষম।
অ্যাফ্যান্টাসিয়ার শিকার ব্যক্তিরা একটি অনলাইন কমিউনিটিতে মিলিত হন। সেখানে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এবং এই অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করেন। অনেকে তাদের দৈনন্দিন জীবনে স্মৃতিচারণে সমস্যার কথা জানান।
তারা অতীতের কোনো ঘটনা মনের চোখে দেখতে পান না, যা অন্যদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক।
অ্যাফ্যান্টাসিয়া এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে একটি জটিল বিষয়। তবে গবেষণা ও আলোচনার মাধ্যমে এই অবস্থা সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা চলছে। মানুষের মস্তিষ্কের ভিন্নতা ও উপলব্ধির বিভিন্নতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক