দাঁতের ডাক্তার থেকে গল্ফার: ম্যাট ভোগটের অদম্য ইচ্ছাশক্তি।
একজন ডেন্টিস্ট, যিনি নিয়মিত দাঁতের চিকিৎসা করেন, তিনি যে বিশ্বখ্যাত ইউএস ওপেন গল্ফ টুর্নামেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন, তা অনেকের কাছেই হয়তো কল্পনার বাইরে। তবে ম্যাট ভোগট নামের এই ব্যক্তি সেই অসাধ্য সাধন করেছেন।
তিনি প্রমাণ করেছেন, কঠোর অধ্যবসায় থাকলে যেকোনো স্বপ্নই সত্যি করা সম্ভব।
ইন্ডিয়ানার বাসিন্দা ম্যাট ভোগট পেশায় একজন ডেন্টিস্ট। কিন্তু খেলাধুলার প্রতি তার ভালোবাসা সবসময়ই ছিল।
বিশেষ করে গল্ফ খেলার প্রতি তার ছিল অন্যরকম আকর্ষণ। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি সম্প্রতি ইউএস ওপেন খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। বর্তমানে বিশ্ব অ্যামেচার র্যাঙ্কিংয়ে তার অবস্থান ২০৭৮।
আসলে, গল্ফ খেলার এই বিশ্ব মঞ্চে পৌঁছানোটা ভোগটের জন্য সহজ ছিল না। কারণ একদিকে যেমন ছিল তার পেশাগত ব্যস্ততা, তেমনি ছিল খেলার প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা।
এই দুটি বিষয়কে তিনি সমানতালে সামলেছেন। মাঝেমধ্যে হয়তো মনে হয়েছে, এত কঠিন পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি।
এবারের ইউএস ওপেন অনুষ্ঠিত হচ্ছে পেনসিলভেনিয়ার ওকмонт কান্ট্রি ক্লাবে। এই মাঠের সঙ্গে ভোগটের রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক।
ছোটবেলায় তিনি এখানে ক্যাডি হিসেবে কাজ করতেন। এই মাঠেই তার গল্ফের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। তাই এই টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পাওয়াটা তার জন্য অত্যন্ত আনন্দের।
তবে এই আনন্দের মুহূর্তে ভোগটের মনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। টুর্নামেন্ট শুরুর কয়েক মাস আগে তিনি তার বাবাকে হারিয়েছেন।
বাবার স্মৃতি সবসময় তার সঙ্গে রয়েছে। তিনি বলেন, “আমার বাবা শুধু আমার শিক্ষকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন আমার অনুপ্রেরণা।
বাবার উৎসাহ এবং ভালোবাসাই আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছে।”
সম্প্রতি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বাছাইপর্বে পরপর দুটি রাউন্ডে ৬৮ স্কোর করে তিনি শীর্ষস্থান অর্জন করেন এবং ইউএস ওপেনে খেলার যোগ্যতা লাভ করেন।
এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে তার কঠোর অনুশীলন এবং আত্মবিশ্বাস।
ভোগট বলেন, “আমি সবসময় গণিত এবং বিজ্ঞান ভালোবাসতাম। তাই কলেজেও বায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করি এবং ডেন্টিস্ট হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
কারণ আমি মানুষের সঙ্গে মিশতে এবং তাদের জীবনে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলাম।”
২০১৮ সালে তিনি নিজের চেম্বার খোলেন। এরপর ধীরে ধীরে গল্ফের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দিতে শুরু করেন।
তিনি বলেন, “আমি হয়তো পেশাদার গল্ফার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি, তবে এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
আমার স্ত্রী এবং ১৫ মাস বয়সী মেয়ের সমর্থন আমার কাছে অনেক মূল্যবান।”
ভোগট তার সাফল্যের জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
যদি তুমি কোনো কিছু আন্তরিকভাবে চাও, তাহলে তা অবশ্যই পূরণ হবে।”
ম্যাট ভোগটের এই গল্প আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা। যারা স্বপ্ন দেখেন, কিন্তু নানা কারণে তা পূরণ করতে পারেন না, তাদের জন্য ভোগটের এই জয় একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন