কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি।
কোটা সংস্কারের আন্দোলনে শুরুথেকেই সক্রীয় ছিলেন পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার আসপদ্দি গ্রামের মাদ্রাসার ছাত্র মোহাম্মদ আলী।
জুলাই ২০২৪ স্বাধীনতার একদফা আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট পতনের কমপ্লিট শর্টডাউন একদফা কর্মসূচীর গণ-আন্দোলনে রাজপথে নেমেছিলো মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা। রাজপথ যখন বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল তখন স্লোগানে স্লোগানে বারুদ হয়ে ফুটেছিল কিশোর মোহাম্মদ আলী। ৫ আগষ্ট ফেসিস্ট হাসিনা ভারতে পলায়নের মধ্যদিয়ে দেশ ফেসিস্ট মুক্ত এবং দ্বিতীয় স্বাধীনতা লাভকরে। কিন্তু এখনো পেটে কোমরে সহ সারা শরীরে ফেসিস্ট সরকারের পুলিশের গুলির ক্ষতবিক্ষত আৎকেওঠা দাগ নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছেন এই কিশোর যোদ্ধা।
কাউখালী উপজেলার কেন্দ্রীয় ফাজিল মাদরাসার ছাত্র মরহুম মাওলানা সাখাওয়াতুল্লাহ (মক্কী) হুজুর এর ছেলে মোহাম্মদ আলী।
কৃতিত্বের ছাপ চোখে মুখে এ প্রতিনিধিকে জানান- আমার মরহুম আব্বা পবিত্র কাবা ঘরের খাদেমের দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সেখানেই ইন্তেকাল করেন। দাখিল পরীক্ষাপরবর্তী ঢাকা উত্তরায় চাকুরীর সন্ধানে যাই। অসচ্ছল পরিবারের হাল ধরতে টুকটাক আয় রোজগার করছিলাম। আওয়ামী দুর্শাসন পুলিশ, বিজিবির নৃশংসতায় চরম ক্ষুদ্ধ করেছিলো আমাকে, ফলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হই।
উত্তরায় ৬নং সেক্টরের আজমপুর এলাকায় ১৮ জুলাই পুলিশ ব্যাপক গুলিচালায় আমাদের মিছিলের ওপর। আমার শরীরে রাবার বুলেট ও গুলি লাগে তবুও পিছু হইনি। অনেক সহ যোদ্ধাকে শহীদ হতে দেখেও দেশ স্বাধীন করার শপথে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সামনে এগিয়ে চলতে শুরুকরি।
একপর্য়য়ে আমার পেটে কোমরে পায়ে ব্যাপক গুলি বিদ্ধ হই। তাজারক্তে রঞ্জিত হয় পিচঢালা রাজপথ। একটা সময় জ্ঞান হারালে নিজেকে আবিস্কার করি কুর্মিটোলা মেডিকেলে। সেনাবাহীনির তত্বাবধানে চিকিৎসা হয়েছে বিধায় পুলিশ কোন ঝামেলা ছিলোনা। আমার মা এবং মামাদের সহায়তায় প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক টাকা খরচ করেছেন আমার চিকিৎসার জন্য।
পরবর্তীতে সরকারীভাবে এবং জুলাই উত্থান থেকে সহায়তা করা হয় আমার চিকিৎসার জন্য। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী বর্তমানে কাউখালীর বাড়ি থেকে নিয়মিত বরিশাল কাশিপুরে সি আ পি হসপিটালে চেকআপ করতে যেতে হয়। আমার বিধবা মা, এক বোন আর পাঁচ ভাইয়ের সংসার। পারিবারিক ভাবে অসচ্ছল হওয়ার কারনেই উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া সম্ভব নয়। চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তার রয়েছে আলী এবং তার পরিবার। বড় ধরনের ক্ষতির আশংকায় তার চিকিৎসা আর অপারেশন করতে বিব্রতবোধ করছে চিকিৎসা করা বলে জানান আলী। মোহাম্মদ আলী ধুকছেন অসহ্য যন্ত্রনা আর ভবিষ্যতের আশংকায়। ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে স্পস্টদৃশ্যমান অপারেশনের দাগগুলো। পুলিশের গুলির ক্ষতচিহ্ন।
সু-চিকিৎসা আর রাস্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবী স্বাধীনতাযুদ্ধের রাজপথ থেকে ফিরে আসা তরুন যোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর।
বাংলাদেশ সরকারের কাছে জুলাই বিপ্লবের এই আহত ক্যাটাগরি-১ কিশোর আবাবিল খ্যাত যোদ্ধা মোহাম্মদ আলী আরো বলেন- জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের চুড়ান্ত তালিকা করে গেজেটভুক্ত করে যথাযথ মূল্যায়ন এবং যেমন বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলাম তেমন যেনো দেখতে পাই।
পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে বিপ্লবী ছাত্র জনতার বিপক্ষে না গিয়ে এবং বর্তমান সরকারের সংস্কার উদ্যোগ সঠিক ভাবে পালন করতে সহায়তা করার ও আহবান জানান কিশোর যোদ্ধা মোহাম্মদ আলী।