ইতালির পার্বত্য শহর অ্যাসিজিতে সেন্ট ফ্রান্সিসের সমাধিতে প্রার্থনা করতে আসা তীর্থযাত্রীদের ভিড় এখনো চোখে পড়ার মতো।
পোপ ফ্রান্সিস নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ও এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
সেন্ট ফ্রান্সিস ছিলেন মধ্যযুগের একজন সাধু, যিনি দরিদ্র ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার জন্য পরিচিত।
পোপ তাঁর সম্মানার্থে নিজের নাম ‘ফ্রান্সিস’ রেখেছেন।
অ্যাসিজি, মধ্য ইতালির একটি ঐতিহাসিক শহর, যা একসময় সেন্ট ফ্রান্সিসের জন্মস্থান ছিল।
এখানকার পাথরের তৈরি পুরনো বাড়িগুলো আজও সেই সময়ের স্মৃতি বহন করে।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইতালির বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বহু তীর্থযাত্রী সেন্ট ফ্রান্সিসের সমাধিতে প্রার্থনা করেছেন।
তাঁদের মতে, সেন্ট ফ্রান্সিসের দরিদ্রের প্রতি ভালোবাসা, শান্তি এবং প্রকৃতির প্রতি সম্মান—এগুলো পোপ ফ্রান্সিসের গুরুত্বপূর্ণ আদর্শ।
সেন্ট ফ্রান্সিসের জীবন ছিল ত্যাগ ও তিতিক্ষার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তিনি ১১৮২ সালে অ্যাসিজিতে এক ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রচলিত আছে, তিনি ঈশ্বরের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন।
এমনকী নিজের পোশাক পর্যন্ত বিলিয়ে দেন।
এরপর তিনি দরিদ্রদের পক্ষে কথা বলা শুরু করেন এবং একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের গোড়াপত্তন করেন, যা বর্তমানে ‘ফ্রান্সিসকান’ নামে পরিচিত।
অ্যাসিজির বর্তমান বিশপ ডোমেনিকো সোরেন্টিনো মনে করেন, সেন্ট ফ্রান্সিসের এই আত্মত্যাগ প্রকৃতি ও শান্তির প্রতি তাঁর ভালোবাসার প্রতীক।
বিশপ সোরেন্টিনো বলেন, “ফ্রান্সিস নিজেকে উৎসর্গ করার মাধ্যমে প্রকৃতির কাছাকাছি এসেছিলেন।
তাই আমাদের ঈশ্বরের দান হিসেবে প্রকৃতিকে গ্রহণ করতে হবে এবং এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।”
সেন্ট ফ্রান্সিসের জীবন শুধু ত্যাগের দৃষ্টান্তই নয়, আন্তঃধর্মীয় সংলাপের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অনুকরণীয়।
ক্রুসেডের সময় তিনি একজন মুসলিম সুলতানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন, যা বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে আলোচনা ও বোঝাপড়ার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
পোপ ফ্রান্সিস তাঁর নামের মাধ্যমে সেন্ট ফ্রান্সিসের আদর্শকেই তুলে ধরেন।
২০১৩ সালে পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এই নামটি গ্রহণ করেন।
ভ্যাটিকানের ‘ওয়ার্ল্ড চিলড্রেনস ডে’ কমিটির প্রধান ফাদার এনজো ফোরচুনাতো বলেন, “পোপ ফ্রান্সিস খুব সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে তিনি কেন ফ্রান্সিস নামটি বেছে নিয়েছেন।
কারণ, তিনি শান্তি, দরিদ্র ও ভ্রাতৃত্বের মানুষ।
তিনি প্রকৃতিকে ভালোবাসেন এবং সম্মান করেন।”
পোপ ফ্রান্সিসের বিভিন্ন বার্তায় সেন্ট ফ্রান্সিসের চিন্তা ও আদর্শের প্রতিফলন দেখা যায়।
উদাহরণস্বরূপ, পরিবেশ রক্ষার গুরুত্বের ওপর লেখা তাঁর একটি বার্তায় সেন্ট ফ্রান্সিসের ‘ক্যান্টিকল অফ ক্রিয়েচারস’ -এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
যেখানে তিনি সূর্য, চাঁদ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানকে ভাই ও বোন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
অ্যাসিজির বেসিলিকাগুলোতে সেন্ট ফ্রান্সিসের জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা চিত্রিত করা হয়েছে।
এখানকার দেয়ালচিত্রে শিল্পকলা ও স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন দেখা যায়।
এই স্থানটি ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেয়েছে।
সেন্ট ফ্রান্সিসের পাশাপাশি, অ্যাসিজিতে সেন্ট ক্লারের বাসিলিকাও রয়েছে।
সেন্ট ক্লারা ছিলেন সেন্ট ফ্রান্সিসের অনুসারী।
তিনি ফ্রান্সিসের মতোই কঠোর দারিদ্র্যকে বেছে নিয়েছিলেন।
অ্যাসিজি বর্তমানে “হোলিনেসের ঘনঘটা” হিসেবে পরিচিত, যেখানে সাধু ফ্রান্সিসের আদর্শ আজও মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করে।
আগামী বছর সেন্ট ফ্রান্সিসের ‘ক্যান্টিকল অফ ক্রিয়েচারস’-এর ৮০০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস