গুগল তাদের সার্চ ইঞ্জিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি, তারা তাদের অত্যাধুনিক ‘জেমিনি ২.০’ নামক এআই মডেলটি সার্চ ইঞ্জিনের সাথে যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে ব্যবহারকারীরা এখন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এবং গণিতের মতো জটিল বিষয়গুলো সম্পর্কে আরও সহজে জানতে পারবে।
গত মে মাস থেকে, গুগল এআই-এর মাধ্যমে তৈরি করা সারসংক্ষেপ বা ‘এআই ওভারভিউ’ তাদের সার্চ ফলাফলের উপরে দেখাচ্ছে। এর ফলে, যারা গুগলের সার্চ ফলাফলের মাধ্যমে তাদের ওয়েবসাইটে দর্শক আকর্ষণ করে, তাদের ওয়েবসাইটে ট্রাফিকের পরিমাণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, ব্যবহারকারীরা এখন সরাসরি এআই ওভারভিউ থেকেই প্রয়োজনীয় তথ্য পেলে ওয়েবসাইটে যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করবে না।
গুগল বর্তমানে ‘এআই মোড’ নামে একটি নতুন অপশন তৈরি করছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য আরও বেশি এআই ওভারভিউ তৈরি করবে। তবে, গুগল সতর্ক করে জানিয়েছে যে, এআই মোডে দেওয়া তথ্য সব সময় সঠিক নাও হতে পারে। অনেক সময় এতে ভুল তথ্য বা ‘হ্যালুসিনেশন’ দেখা যেতে পারে। স্বাস্থ্য ও আর্থিক বিষয়ক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এই মোড ব্যবহার করলে, সঠিক তথ্যের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুরুতে, এই ‘এআই মোড’ শুধুমাত্র তাদের ‘গুগল ওয়ান এআই প্রিমিয়াম’ গ্রাহকদের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। এই সেবা পেতে গ্রাহকদের প্রতি মাসে প্রায় ২,০০০ টাকার বেশি খরচ করতে হবে (ডলারের হিসেবে যা ২০ ডলার)। তবে, সাধারণত এই ধরনের পরীক্ষা সফল হলে, তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। গুগল এই পদক্ষেপ নিচ্ছে কারণ তারা চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) এবং পারপ্লেক্সিটির (Perplexity) মতো এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিনগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে চায়।
গুগলের এই নতুন পদক্ষেপ অনলাইন প্রকাশকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, এআই ওভারভিউয়ের কারণে ওয়েবসাইটে ট্রাফিকের পরিমাণ কমে গেলে, তারা তাদের ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ডিজিটাল বিজ্ঞাপন হলো অনলাইন প্রকাশকদের আয়ের প্রধান উৎস।
গুগলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, এআই ওভারভিউ ব্যবহারকারীদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করে এবং তারা আরও বেশি তথ্যের জন্য অনুসন্ধান করতে উৎসাহিত হয়, যা অন্যান্য ওয়েবসাইটে ক্লিক বাড়াতে সাহায্য করে। তবে, প্রকাশকরা মনে করেন যে, এআই ওভারভিউয়ের মাধ্যমে গুগলই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ, গুগল বর্তমানে বিজ্ঞাপন থেকে বছরে ২৬০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করে।
এআই ওভারভিউয়ের এই বর্ধিত ব্যবহারের ফলে গুগলের বিরুদ্ধে একচেটিয়া ব্যবসার অভিযোগ আরও বাড়তে পারে। গত বছর, একটি ফেডারেল আদালত গুগলের সার্চ ইঞ্জিনকে একচেটিয়া ব্যবসা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বর্তমানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ গুগলকে ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, যার মধ্যে তাদের ক্রোম ব্রাউজার বিক্রি করাও অন্তর্ভুক্ত। গুগলের বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার শুনানি আগামী মাসেই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
শিক্ষামূলক অনলাইন পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘চেগ’ (Chegg) এরই মধ্যে গুগলের বিরুদ্ধে তাদের সাইট থেকে তথ্য নিয়ে এআই ওভারভিউ তৈরীর অভিযোগ এনেছে। এই বিষয়ে তারা আদালতে মামলাও করেছে। যদিও গুগল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস