ডিগ আবার ফিরছে: ‘মানবতা ও সংযোগ’-এর উপর জোর দিয়ে নতুন রূপে যাত্রা শুরু
সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে এক সময়ে খুবই পরিচিত নাম ছিল ‘ডিগ’। রেডিটের (Reddit) আগে, অনলাইন পোস্টে আপ-ভোট (ভালো লাগা) এবং ডাউন-ভোটের (খারাপ লাগা) ধারণা জনপ্রিয় করে তুলেছিল এই প্ল্যাটফর্মটি। এবার সেই ডিগ-কে নতুন রূপে ফিরিয়ে আনছেন এর প্রতিষ্ঠাতা কেভিন রোজ এবং রেডিটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অ্যালেক্সিস ওহানিয়ান। তাঁদের মূল লক্ষ্য হলো, “মানবতা ও সংযোগ” স্থাপন করা। এক্ষেত্রে তাঁরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেবেন।
ডিগ-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে। ব্যবহারকারীরা এখানে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে আসা কনটেন্ট-এ ভোট দিতে পারতেন, যা ডিগ বা বুরি (খারিজ) করার সুযোগ দিত। এক সময়ে এর মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় চার কোটি। সেই সময়ে, যখন ফেসবুক-এর ব্যবহারকারী সংখ্যাও এতটা বাড়েনি (২০০৮ সালে ফেসবুকের ব্যবহারকারী ছিল ১০ কোটি), ডিগ-এর এই জনপ্রিয়তা ছিল উল্লেখ করার মতো।
২০১২ সালে ডিগ-কে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এর অনেক সম্পদ ও পেটেন্ট কিনে নেয় লিংকডইন। রেডিট, যা ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে, ব্যবহারকারীদের ভালো ও খারাপ কনটেন্ট-এর উপর ভোট দেওয়ার সুযোগ দিয়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।
২০১২ সালের পর থেকে ডিজিটাল বিশ্বে অনেক পরিবর্তন এসেছে। শুধু এআই-এর উন্নতিই নয়, অনলাইনে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। ডিগ-এর নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাস্টিন মেজেলের মতে, “বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের জগৎ আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয়ে উঠেছে। মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্ল্যাটফর্মগুলো যেন আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইন্টারনেটের সত্যিকারের টাউন হল যদি কিছু থেকে থাকে, তবে মনে হয় সেটির কাঠামো ভেঙে গেছে।”
ডিগ-এর নতুন নেতৃত্ব মনে করেন, এআই ব্যবহার করে সামাজিক মিডিয়া সাইটের “কাজের চাপ” কমানো সম্ভব হবে। এর ফলে, মানুষ অনলাইনে অর্থপূর্ণ কমিউনিটি তৈরি করতে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারবে। মেজেল প্রশ্ন করেন, “কিভাবে মানুষকে আলোচনা করতে, একে অপরের কাছ থেকে শিখতে, এবং আগ্রহের বিষয়গুলো আন্তরিকভাবে শেয়ার করতে উৎসাহিত করা যায়?” কারণ, বর্তমানের কিছু সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদম “রাগ বাড়ানোর” দিকে বেশি মনোযোগ দেয়।
কেভিন রোজ জানিয়েছেন, কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে ডিগ আরও সূক্ষ্ম পদ্ধতি অবলম্বন করবে। কোনো কনটেন্ট একেবারে নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে, এর দৃশ্যমানতা সীমিত করা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো মেডিটেশন গ্রুপে কেউ যদি আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করে, তবে সেই পোস্টটি সবাই দেখতে পাবে না, বরং নির্দিষ্ট কিছু মানুষের কাছে তা সীমাবদ্ধ রাখা হবে। রোজ আরও বলেন, “এটি একটি বিশেষ পদ্ধতি। আমরা কমিউনিটির কণ্ঠস্বর এবং ইকোসিস্টেমের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করব।”
কর্নেল ইউনিভার্সিটির সিটিজেনস অ্যান্ড টেকনোলজি ল্যাব-এর গবেষণা ব্যবস্থাপক সারা গিলবার্ট, যিনি কনটেন্ট মডারেশন নিয়ে কাজ করেন, জানিয়েছেন, বর্তমানে অনেক সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট মডারেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয় এবং মডারেটরদের এই অটোমেশন টুলগুলোর উপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ থাকে। তিনি আরও বলেন, “সমস্যা হলো, অনেক এআই পরিস্থিতি-নিরপেক্ষ। তারা সাধারণত বিদ্বেষপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর বেশি মনোযোগ দেয়, যা মডারেটরদের কাজ করা বিষয়গুলোর একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। এছাড়াও, এই মডেলগুলো বৈষম্যমূলক হতে পারে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে দমন করতে পারে। তাই, এআই-এর সহায়তায় তৈরি হওয়া মডারেশন সরঞ্জামগুলোকে কমিউনিটির নিয়ম এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে হবে, সেইসাথে মানুষকেও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রাখতে হবে।”
খুব শীঘ্রই ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নতুন ডিগ-এর যাত্রা শুরু হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস