যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক: ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারির কথা ভাবছেন ট্রাম্প
ওয়াশিংটন ডিসি, [তারিখ], ২০২৪: ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপের কথা বিবেচনা করছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার তিনি এই ইঙ্গিত দেন। ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া স্থগিত করার কয়েক দিনের মধ্যেই এমন সিদ্ধান্তের কথা জানালেন তিনি।
ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘রাশিয়া বর্তমানে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনকে একেবারে পর্যুদস্ত করছে’। এই পরিস্থিতিতে তিনি এই পদক্ষেপ নিতে পারেন। তবে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকতে পারে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। কারণ, তিনি একদিকে যেমন ইউক্রেনের উপর শান্তি চুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন, তেমনই রাশিয়ার আগ্রাসনের দায়কে খাটো করে দেখছেন বা অস্বীকার করছেন।
ট্রাম্প তার পোস্টে আরও বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেন, এখনই আলোচনার টেবিলে বসুন, দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই’।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের ইকোনমিক ক্লাবে দেওয়া বক্তব্যে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে এবং শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর দেশটির বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও জাহাজের উপর হাজার হাজার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এছাড়াও, রুশ তেলের দামের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে, বেসেন্ট বাইডেনের নিষেধাজ্ঞাকে ‘গুরুতর দুর্বল’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এর কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেলের বাজারে ঊর্ধ্বগতির চাপ নিয়ে উদ্বেগ।
হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হাসেট শুক্রবার সাংবাদিকদের জানান, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে রাশিয়ার অর্থনীতির উপর আরও চাপ সৃষ্টি করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
হাজেট আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান, সবাই আলোচনার টেবিলে বসুক। আমরা আলোচনার মাধ্যমে অথবা কঠিন পদক্ষেপের মাধ্যমে এটি করতে পারি’।
এদিকে, শুক্রবার পাওয়া খবরে জানা যায়, রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এতে দেশটির নাগরিকদের বিদ্যুৎ ও গরম সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে, সেইসাথে অস্ত্রের কারখানায়ও প্রভাব পড়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করার কয়েক দিন পরই এই হামলা হয়। ইউক্রেনকে শান্তি চুক্তিতে রাজি করাতে এমনটা করা হয়েছে বলে জানা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ছাড়া রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানো এবং তাদের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার ক্ষমতা অনেকটাই কমে যাবে ইউক্রেনের।
তবে, ট্রাম্প সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত গোয়েন্দা তথ্য স্থগিতের সুযোগ নিচ্ছেন এবং ইউক্রেনের উপর আরও বেশি আঘাত হানছেন—এমনটা তিনি মনে করেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, পুতিন স্বাভাবিকভাবেই যা করার তাই করছেন’।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শান্তি চুক্তির ব্যাপারে কতটা আন্তরিক, সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করা সহজ হতে পারে, কারণ তাদের হাতে সব তাস রয়েছে এবং তারা এই মুহূর্তে তাদের উপর বোমা ফেলছে’।
পরবর্তী সপ্তাহে সৌদি আরবে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারকো রুবিও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প।
ক্ষমতার দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার তেল রাজস্বকে লক্ষ্য করে আঘাত করাই হবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার সেরা উপায়। তিনি মনে করেন, তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস (OPEC+) এই যুদ্ধ বন্ধের চাবিকাঠি হতে পারে, কারণ তারা তেলের দাম কমাতে পারে।
তবে, ওপেক প্লাস-এর দেশগুলো, বিশেষ করে তেল সমৃদ্ধ সৌদি আরব থেকে এই প্রস্তাব তেমন সাড়া পায়নি।
পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক সব সময়ই জটিল ছিল। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্তের বিষয়টি উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, একটি যুদ্ধবিরতি হলে পুতিন ইউক্রেনে পুনরায় যুদ্ধ শুরু করবেন না।
গত সপ্তাহে ওভাল অফিসে জেলেনস্কির সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘পুতিন আমার সঙ্গে অনেক কঠিন সময় কাটিয়েছেন’। তিনি আরও বলেন, ‘তারা তাকে এবং রাশিয়াকে ব্যবহার করে একটি ভুয়াwitch hunt চালিয়েছিল। রাশিয়া, রাশিয়া, রাশিয়া—এইসব শুনেছেন?’
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস