যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনায় ১৫ বছর পর প্রথমবারের মতো কোনো আসামিকে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
শুক্রবার (ফেব্রুয়ারি মাসের হিসেবে) ৬৭ বছর বয়সী ব্র্যাড সিগমনকে এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
২০০১ সালে সাবেক প্রেমিকার বাবা-মাকে হত্যার দায়ে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কারণ হিসেবে জানা যায়, সিগমনের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, ইলেক্ট্রিক চেয়ারে মৃত্যুদণ্ড দিলে তিনি ‘জীবিত অবস্থায়’ পুড়ে যাবেন, আর ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিষ প্রবেশ করালে ফুসফুসে তরল জমে তার শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
তাই তিনি এই পদ্ধতি বেছে নিতে রাজি হয়েছিলেন।
ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় তিনজন কারারক্ষী রাইফেল দিয়ে গুলি করেন।
নিয়ম অনুযায়ী, আসামীর বুক বরাবর একটি সাদা লক্ষ্যবস্তু স্থাপন করা হয়।
এরপর প্রায় ১৫ ফুট দূর থেকে একসঙ্গে তিনজন গুলি চালান।
গুলির শব্দে লক্ষ্যবস্তুটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় এবং সিগমনের বুকে রক্তের দাগ দেখা যায়।
এরপর প্রায় ৯০ সেকেন্ড ধরে একজন চিকিৎসক তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ইতিহাস বেশ পুরোনো।
অতীতে সেনাবাহিনীর বিদ্রোহ দমন বা পুরোনো দিনের পশ্চিমা বিশ্বে অপরাধীদের শাস্তি দিতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো।
এমনকি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও নাৎসি জার্মানির মতো দেশেও রাজনৈতিক নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ফায়ারিং স্কোয়াড ব্যবহৃত হয়েছে।
দক্ষিণ ক্যারোলিনার গভর্নর হেনরি ম্যাকমাস্টার সিগমনের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করতে রাজি হননি।
এর আগে, সিগমনের আইনজীবী এবং সমর্থকরা তার সাজা পরিবর্তনের আবেদন জানিয়েছিলেন।
তারা যুক্তি দেখিয়েছিলেন, সিগমন একজন ভালো কয়েদি ছিলেন এবং তিনি তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ছিলেন।
এছাড়াও, তিনি গুরুতর মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ ক্যারোলিনায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য সাধারণত ইলেক্ট্রিক চেয়ার বা প্রাণঘাতী ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়।
২০০০ সালের শুরুর দিকে, দক্ষিণ ক্যারোলিনা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিক থেকে বেশ সক্রিয় ছিল এবং বছরে গড়ে তিনটি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো।
কিন্তু প্রাণঘাতী ইনজেকশনের ওষুধ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ায় ১৩ বছর ধরে এখানে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত ছিল।
বর্তমানে, এই রাজ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৮ জন কয়েদি রয়েছে।
তাদের মধ্যে দু’জনের আপিল প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে এবং সম্ভবত চলতি বসন্তে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস