কেনিয়ার রাস্তায় ভীতির আবহ, সরকার সমালোচকদের অপহরণের ঘটনা বাড়ছে
নয়াদিল্লি, ২৮শে মে: কেনিয়ার বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি সরকার সমালোচক এবং ভিন্নমতের অনুসারীদের অপহরণের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এসব অপহরণের পেছনে সরকারি মদত রয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে, অনেকেই এখন তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত।
গত ১৯শে আগস্ট, জামিল ও আসলাম লঙটন নামের দুই ভাই নাইরোর কাছে কিটেঙ্গেলা শহরে তাদের সাইবার ক্যাফে থেকে ফেরার পথে অপহরণের শিকার হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সাদা পোশাকে আসা কয়েকজন লোক তাদের গাড়ি থামিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। জামিল জানান, তাদের সন্দেহ হচ্ছে, অপহরণকারীরা হয়তো পুলিশ ছিল। কারণ, তার ভাই আসলাম সরকার বিরোধী বিক্ষোভে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। অপহরণের কয়েক দিন আগে এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা তাকে ফোন করে তার ভাইকে বিক্ষোভ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন।
অপহরণকারীরা জামিল ও আসলামকে একটি অন্ধকার ঘরে বন্দী করে রাখে। সেখানে তাদের মারধর করা হয় এবং স্থানীয় বিক্ষোভের অর্থ যোগানদাতা সম্পর্কে তথ্য জানতে চাওয়া হয়। অপহরণকারীদের দাবি করা হয় তথ্য না দিলে তাদের মেরে ফেলা হবে। এরপর তাদের মুক্তি দিলেও, এই ঘটনার রেশ এখনো কাটেনি। জামিল জানান, তারা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
কেনিয়ার মানবাধিকার কমিশন (কেএনসিএইচআর)-এর তথ্য অনুযায়ী, জুন মাস থেকে শুরু হওয়া সরকার বিরোধী বিক্ষোভের পর থেকে এ পর্যন্ত ৮২ জন নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের মধ্যে এখনো ২৯ জনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, অপহরণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কেনিয়ার পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার সদস্য।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সরকার এসব অপহরণের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও, পরিস্থিতি তাদের উদ্বেগের কারণ। এমনকি প্রেসিডেন্ট রুতোও একসময় অপহরণের খবরকে ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। যদিও পরে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে অপহরণের ঘটনা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
শুধু কেনিয়ার নাগরিকরাই নন, বিদেশি নাগরিকরাও এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। তানজানিয়ার মানবাধিকার কর্মী মারিয়া সারুঙ্গি সেহাই-কে নাইরোর একটি সেলুন থেকে অপহরণ করা হয়। তার অভিযোগ, তানজানিয়ার সরকারের সমালোচক হওয়ার কারণে তাকে অপহরণ করা হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, কেনিয়ার এই পরিস্থিতি দেশটির গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, অপহরণ বন্ধ করতে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা