কেনিয়ার ‘শান্তিদূত’ ইমেজ কি প্রশ্নের মুখে? সুদান ও কঙ্গোর ঘটনার জেরে আঞ্চলিক সম্পর্কে টানাপোড়েন
নয়াদিল্লি, [তারিখ]- কেনিয়ার এক সময়ের পরিচিতি ছিল পূর্ব আফ্রিকার শান্তি স্থাপনকারী হিসেবে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে যখনই কোনো সংকট দেখা দিয়েছে, কেনিয়া আলোচনার টেবিলে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু বর্তমানে দেশটির প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর কার্যকলাপে সেই ভাবমূর্তি সম্ভবত প্রশ্নের মুখে।
সম্প্রতি সুদান ও কঙ্গোর বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কেনিয়ার সরকারের কিছু পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
সর্বশেষ ঘটনাপ্রবাহে, সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধে কেনিয়ার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। সুদানে সশস্ত্র বাহিনী (SAF) এবং আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF)-এর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলছে। RSF-এর প্রতি কেনিয়ার সমর্থনের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে RSF-এর প্রতিনিধিদের বৈঠক করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা সুদানের সরকার ভালোভাবে নেয়নি। সুদানের সরকার কেনিয়া থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সুদানের সশস্ত্র বাহিনী কেনিয়ার প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ এবং RSF-কে সমর্থন করার শামিল বলে মনে করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেনিয়ার এই পদক্ষেপ নিরপেক্ষতার অভাব প্রমাণ করে। তাদের মতে, কেনিয়া যেন কূটনীতির মাঠে আত্মঘাতী গোল দিয়েছে। শুধু তাই নয়, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট রুটো সরাসরি RSF প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা বিতর্ক আরও বাড়িয়েছে।
আফ্রিকার আরেক দেশ কঙ্গোর পরিস্থিতিও কেনিয়ার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। DRC-তে বিদ্রোহীদের সঙ্গে কেনিয়ার সম্পর্ক নিয়ে দেশটির সরকার অসন্তুষ্ট। বিশেষ করে, M23 নামের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতাদের কেনিয়া আশ্রয় দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেনিয়ার মাটিতে ওই বিদ্রোহীদের বৈঠক করা নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। DRC সরকার মনে করে, কেনিয়া বিদ্রোহীদের দমনে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কেনিয়ার বর্তমান নীতি দেশটির অতীতের ভাবমূর্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অতীতে সোমালিয়া ও সুদানের মতো দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কেনিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এখন সুদান ও DRC-এর ঘটনায় কেনিয়ার অবস্থান তার আঞ্চলিক প্রভাবের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনেকে মনে করেন, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট রুটোর কিছু বিতর্কিত মন্তব্য এবং পদক্ষেপ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তুলেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, কেনিয়ার এই দ্বি-মুখী নীতি দেশটির অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্যও উদ্বেগের কারণ। দেশের ভেতরেও বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভ হচ্ছে। জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি অসন্তোষ বাড়ছে। এমতাবস্থায়, কেনিয়ার সরকার কিভাবে এই সংকট মোকাবেলা করে, সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা