মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পোল্যান্ডের মধ্যে সম্প্রতি স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট পরিষেবা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
ইউক্রেনকে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এই স্যাটেলাইট ব্যবস্থার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় দুই দেশের মধ্যে এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়।
পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লাভ সিকোরস্কি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, স্টারলিঙ্ক পরিষেবা নির্ভরযোগ্য না হলে ইউক্রেনের বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজে বের করতে হতে পারে।
এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন সিনেটর মার্কো রুবিও কড়া ভাষায় সিকোরস্কির সমালোচনা করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী “মিথ্যা বলছেন” এবং ইউক্রেনকে স্টারলিঙ্ক পরিষেবা দেয়ার জন্য পোল্যান্ড যে অর্থ খরচ করে, সেটির প্রতিদান দিতে তিনি (সিকোরস্কি) ব্যর্থ হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই দেশটির জন্য অত্যাবশ্যকীয় ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করছে স্টারলিঙ্ক।
পোল্যান্ড প্রতি বছর ইউক্রেনের জন্য এই পরিষেবার খরচ হিসেবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রায়) পরিশোধ করে থাকে।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এই বিতর্কের পরে মিত্র দেশগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি সরাসরি কারো নাম উল্লেখ না করলেও, তার এই বক্তব্যকে যুক্তরাষ্ট্র ও পোল্যান্ডের মধ্যকার উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
টাস্ক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “বন্ধু দেশগুলোর উচিত তাদের মিত্রদের প্রতি সম্মান দেখানো, এমনকি তারা দুর্বল হলেও। অহংকার করা উচিত নয়। প্রিয় বন্ধুরা, বিষয়টি নিয়ে ভাবুন।”
মার্কিন সিনেটর রুবিও এর আগে বলেছিলেন, “ইউক্রেনকে স্টারলিঙ্ক পরিষেবা থেকে বিচ্ছিন্ন করার কোনো হুমকি দেওয়া হয়নি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত, কারণ স্টারলিঙ্ক না থাকলে ইউক্রেন অনেক আগেই যুদ্ধে হেরে যেত এবং রাশিয়ানরা এখন পোল্যান্ডের সীমান্তে থাকত।”
বিতর্ক আরও বাড়ে যখন ইলন মাস্ক, যিনি স্টারলিঙ্কের মালিক, তিনি এক প্রতিক্রিয়ায় সিকোরস্কিকে “চুপ থাকতে” বলেন এবং তাকে “ছোট মানুষ” হিসেবে অভিহিত করেন।
মাস্কের এমন মন্তব্যের পর ইউক্রেন যুদ্ধে স্টারলিঙ্কের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।
সম্প্রতি, ফ্রান্স-ব্রিটিশ স্যাটেলাইট অপারেটর ইউটেলস্যাটের শেয়ারের দাম প্রায় ৬৫০% বেড়ে যায়।
ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনকে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে স্টারলিঙ্কের বিকল্প হতে পারে এই কোম্পানি।
তবে, বিতর্কের মধ্যে ইলন মাস্ক পরিষ্কার করেছেন যে, ইউক্রেনে স্টারলিঙ্ক পরিষেবা বন্ধ করা হবে না।
তিনি বলেন, “আমি ইউক্রেন নীতি নিয়ে যতই দ্বিমত পোষণ করি না কেন, স্টারলিঙ্ক তার টার্মিনাল বন্ধ করবে না… আমরা কখনোই এমন কাজ করব না অথবা এটিকে দর কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করব না।”
এই ঘটনার জেরে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, ইউক্রেন যুদ্ধে স্যাটেলাইট নির্ভরতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত।
বিশেষ করে, প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে দুর্বল দেশগুলোর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতা কতটা নির্ভরযোগ্য, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান