যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যেই কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন মার্ক কার্নি। রবিবার অনুষ্ঠিত লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন তিনি। এই নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন ৮৫.৯ শতাংশ ভোট।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হবেন তিনি। জানুয়ারিতে ট্রুডো পদত্যাগ করার ঘোষণা দিলেও নতুন প্রধানমন্ত্রী শপথ না নেওয়া পর্যন্ত তিনিই ক্ষমতায় থাকবেন। ধারণা করা হচ্ছে, মার্ক কার্নি খুব শীঘ্রই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন।
মার্ক কার্নি এমন এক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, যখন কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক কঠিন বাণিজ্য যুদ্ধের মুখোমুখি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিমালার কারণে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ট্রাম্প এর আগে কানাডার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কার্নি একজন অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন একজন ব্যক্তিত্ব। এর আগে তিনি ব্যাংক অফ কানাডা এবং ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট এবং ব্রেক্সিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সফলভাবে মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। এমনকি ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রথম অ-ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, কার্নি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর কানাডার অর্থনীতিকে সুসংহত করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও তিনি তার কূটনৈতিক দক্ষতা কাজে লাগাবেন।
কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মার্ক কার্নির নির্বাচন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ক উত্তেজনা দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে। খাদ্য ও বাসস্থানের মূল্যবৃদ্ধি এবং অভিবাসন ইস্যুতে জাস্টিন ট্রুডোর জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বিরোধী দলগুলো নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। কানাডার অনেক নাগরিক এখন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বর্জন করছেন এবং সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করাও কমিয়ে দিয়েছেন।
মার্ক কার্নি এরই মধ্যে কানাডার জনগণের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “আমরা এই লড়াই চাইনি, তবে কেউ যদি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়, তাহলে কানাডার মানুষ সবসময় প্রস্তুত থাকে। বাণিজ্য হোক কিংবা খেলাধুলা, কানাডা সবসময় জয়ী হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমেরিকা একটি ‘মেল্টিং পট’, যেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতির সংমিশ্রণ রয়েছে। অন্যদিকে, কানাডা একটি ‘মোজাইক’, যেখানে প্রতিটি সংস্কৃতির নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে। আমেরিকা আর কানাডার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে, এবং কানাডা কখনোই আমেরিকার অংশ হবে না।”
মার্ক কার্নি এর আগে গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। তিনি জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূতের দায়িত্বও পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দেশটির সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস