মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বৃহৎ বিনিয়োগ সংস্থা, ব্ল্যাকরক, পানামা খালের প্রবেশমুখে অবস্থিত দুটি বন্দর কেনার চুক্তি করেছে।
হংকং-ভিত্তিক একটি কোম্পানির কাছ থেকে এই বন্দরগুলো কিনতে ২২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে।
ব্ল্যাকরকের এই পদক্ষেপের মূল কারণ হলো, এই জলপথের উপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্বেগ।
ব্ল্যাকরকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা হংকংয়ের কোম্পানি সি কে হাচিসনের থেকে বালবোয়া ও ক্রিস্টোবাল বন্দর দুটি কিনছে।
এই চুক্তির ফলে ব্ল্যাকরক-এর সহযোগী বিনিয়োগকারীরা বিশ্বের ২৩টি দেশের মোট ৪৩টি বন্দরে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো চীনা বা হংকং ভিত্তিক বন্দর নেই।
ব্ল্যাকরকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ল্যারি ফিঙ্ক এই বিনিয়োগকে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, “এই বিশ্বমানের বন্দরগুলো বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে”।
পানামা খাল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জলপথ।
১৯১৪ সালে এটি নির্মাণের পর থেকে বেশ কয়েক বছর ধরে এর নিয়ন্ত্রণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে।
তবে, ১৯৯৯ সালে এক চুক্তির মাধ্যমে পানামার হাতে এর নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করা হয়।
খালটি প্রায় ৫১ মাইল দীর্ঘ এবং বিশ্বের প্রায় ৪ শতাংশ সমুদ্র বাণিজ্য এবং ৪০ শতাংশের বেশি মার্কিন কন্টেইনার পরিবহন এই খালের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়।
শুধু তাই নয়, পানামার অর্থনীতির জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে এই খাল থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে।
পানামার বার্ষিক আয়ের ২৩.৬ শতাংশ আসে এই খাল এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা থেকে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে চীনের সঙ্গে পানামা খালের সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি অভিযোগ করেছিলেন, চীন পানামা খালের উপর নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।
যদিও পানামা খাল বর্তমানে পানামার নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে, ট্রাম্পের এই উদ্বেগের কারণেই ব্ল্যাকরকের এই বিনিয়োগকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারকদের মতে, এই চুক্তির ফলে পানামা খালের উপর থেকে চীনের প্রভাব হ্রাস করা সম্ভব হবে।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসন শুধু চীনের প্রভাব কমানোর বাইরেও পানামার কাছে কিছু দাবি জানিয়েছিল।
এর মধ্যে অন্যতম ছিল, আমেরিকান জাহাজগুলোর জন্য খাল ব্যবহারের খরচ কমানো।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্ল্যাকরকের এই বিনিয়োগ একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।
এর মাধ্যমে একদিকে যেমন পানামা খালের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আরও সুসংহত হবে, তেমনি বিশ্ব বাণিজ্যেও এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এটি বিশেষভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই ধরনের জলপথ তাদের বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা