ইউক্রেন থেকে চালানো ড্রোন হামলায় বিধ্বস্ত ১০টি রুশ অঞ্চল, আলোচনায় বসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা ইউক্রেন থেকে আসা ৩৩৭টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এই ড্রোনগুলো রাশিয়ার ১০টি অঞ্চলে আঘাত হানতে যাচ্ছিল। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, সম্ভবত গত তিন বছরে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে চালানো এটিই সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা। এই হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই সৌদি আরবে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল।
হামলার ফলে একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে মস্কোর বাইরের সপ্রোনোভো গ্রামে একটি আবাসিক ভবনের ওপর একটি ড্রোন আছড়ে পড়ে।
সৌদি আরবের জেদ্দায় এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজে বের করা। জানা গেছে, ইউক্রেনের একটি প্রতিনিধিদল এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির হোয়াইট হাউস সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এরপর এই আলোচনার সূত্রপাত হয়।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ড্রোনগুলোর মধ্যে ১২৬টি ধ্বংস করা হয়েছে ইউক্রেন সীমান্ত সংলগ্ন কুরস্ক অঞ্চলে এবং ৯১টি ধ্বংস করা হয়েছে মস্কো অঞ্চলে। এছাড়াও, বেলগোরোদ, ব্রায়ানস্ক ও ভোরোনজসহ রাশিয়ার অন্যান্য সীমান্তবর্তী এলাকা এবং কালুগা, লিপেতস্ক, নিজনি নভগোরোদ, ওরিওল ও রিয়াজান অঞ্চলের উপরও ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে।
মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন জানিয়েছেন, রাজধানী লক্ষ্য করে ৭০টির বেশি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। মস্কোর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের গভর্নর আন্দ্রেই ভোরোবিয়েভ বলেছেন, হামলায় একজন নিহত হয়েছেন এবং নয়জন আহত হয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন ও গাড়িতেও ক্ষতি হয়েছে। লিপেতস্ক অঞ্চলের গভর্নর ইগর আর্তামোনভ জানিয়েছেন, একজন হাইওয়েতে আহত হয়েছেন।
মস্কোর মেয়র আরও জানান, একটি ভবনের ছাদে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনার পরে, মস্কোর বাইরে অবস্থিত ডোমোদোভো, ভনুকোভো, শেরেমিয়েভো এবং ঝুকভস্কি সহ ছয়টি বিমানবন্দরের কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া, ইয়ারোস্লাভল এবং নিজনি নভগোরোদ অঞ্চলের বিমানবন্দরগুলোতেও ফ্লাইট ওঠা-নামা সাময়িকভাবে স্থগিত ছিল। ডোমোদোভো রেলওয়ে স্টেশনেও ট্রেন চলাচল কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ ছিল।
আলোচনায় ইউক্রেন কৃষ্ণ সাগর এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধের প্রস্তাব দিতে পারে। এছাড়াও, যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি এবং ইউক্রেনের বিরল মৃত্তিকা খনিজ সম্পদ ব্যবহারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি করার সম্ভাবনা রয়েছে।
সৌদি আরবে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের আগে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার মাধ্যমে এই তিন বছরের সংঘাতের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে চায়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা তাদের (ইউক্রেন) কাছ থেকে শুনতে চাই তারা কতদূর যেতে প্রস্তুত এবং রাশিয়ার প্রত্যাশা কী, তা বিবেচনা করে আমরা দেখব আসলে কতটা দূরত্ব রয়েছে।”
মার্কিন প্রতিনিধি দলের প্রধান রুবিও আরও জানান, বিরল মৃত্তিকা খনিজ সংক্রান্ত একটি চুক্তি বৈঠকের সময় সই হতে পারে, তবে এটি ইউক্রেন বা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার পূর্বশর্ত নয়।
তথ্য সূত্র: এ্যাসোসিয়েটেড প্রেস