আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আনা গুরুতর অবহেলার অভিযোগের বিচার শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯শে মে) বুয়েনস আইরেসের একটি আদালতে এই মামলার শুনানি শুরু হয়, যেখানে সাতজন চিকিৎসককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
২০২০ সালের ২৫শে নভেম্বর ৬০ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ম্যারাডোনা।
মস্তিস্কে অস্ত্রোপচারের পর সেরে উঠছিলেন তিনি, কিন্তু কোকেন ও মদের প্রতি আসক্তির কারণে তার শারীরিক অবস্থা বেশ নাজুক ছিল।
অভিযোগ উঠেছে, চিকিৎসকদের গাফিলতির কারণেই তার অকাল মৃত্যু হয়েছে।
দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্তদের আট থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
ম্যারাডোনার প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে আসে সারা বিশ্বে।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ী এই তারকার মৃত্যুতে আর্জেন্টিনার মানুষ গভীর দুঃখ প্রকাশ করে।
কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে রাস্তায় নেমে আসে হাজারো মানুষ, প্রিয় তারকার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।
বুয়েনস আইরেসের প্রেসিডেন্ট প্যালেসে তার মরদেহ রাখা হয়, যেখানে সকলে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় জানায়।
এই বিচার প্রক্রিয়ায় একশোর বেশি সাক্ষী উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এদের মধ্যে ম্যারাডোনার পরিবারের সদস্য এবং দীর্ঘদিন ধরে তার চিকিৎসা করেছেন এমন অনেক চিকিৎসকও রয়েছেন।
বিচারকাজ সম্ভবত জুলাই মাস পর্যন্ত চলবে।
জানা গেছে, ম্যারাডোনাকে অস্ত্রোপচারের পর বুয়েনস আইরেসের একটি ভাড়া বাড়িতে রাখা হয়েছিল, যেখানে তার মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
ঘটনার রাতে দায়িত্বে থাকা নার্স জানান, তিনি কিছু ‘সতর্ক সংকেত’ দেখতে পান, কিন্তু তাকে ম্যারাডোনাকে ‘ডাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি’।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন একজন নিউরোসার্জন, একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, একজন মনোবিজ্ঞানী, একজন চিকিৎসা সমন্বয়কারী, একজন নার্সিং সমন্বয়কারী, একজন চিকিৎসক এবং রাতের বেলা দায়িত্বে থাকা একজন নার্স।
এছাড়া, যে নার্স ম্যারাডোনার মৃতদেহ খুঁজে পান, তিনি আলাদাভাবে জুরিবোর্ডের মাধ্যমে বিচারের আবেদন করেছেন।
সরকারি কৌঁসুলিরা বলছেন, ম্যারাডোনার স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো ছিল ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ এবং ‘ত্রুটিপূর্ণ’।
তাদের মতে, মৃত্যুর আগে দীর্ঘ সময় ধরে ম্যারাডোনাকে সম্পূর্ণভাবে একরকম ‘অবহেলা’ করা হয়েছে।
আর্জেন্টিনার একটি বিশেষজ্ঞ দলও তাদের তদন্তে জানায়, উপযুক্ত চিকিৎসা পেলে ম্যারাডোনার জীবন বাঁচানো যেত।
ম্যারাডোনার পরিবারের আইনজীবী মারিও বাউদ্রির ভাষ্য অনুযায়ী, ফাঁস হওয়া অডিও ও টেক্সট মেসেজ থেকে জানা যায়, তার স্বাস্থ্য গুরুতর ঝুঁকিতে ছিল।
তিনি আরও জানান, অভিযুক্ত চিকিৎসকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ম্যারাডোনার মেয়েদের হস্তক্ষেপ থেকে বাঁচানো, যাতে তারা তাদের ‘আর্থিক ক্ষতি’ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।
তবে, অভিযুক্ত সকল চিকিৎসকই তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অগাস্টিনা কোসাচভের আইনজীবী ভাদিম মিশচানচুক বলেছেন, তিনি তার মক্কেলের নির্দোষিতার ব্যাপারে ‘খুবই আশাবাদী’।
তার দাবি, কোসাচভ ম্যারাডোনার শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের দায়িত্বে ছিলেন।
আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে ‘এল পিবে দে ওরো’ (The Golden Boy) খ্যাত ম্যারাডোনার শৈশব কেটেছে বুয়েনস আইরেসের লা প্যাটার্নাল এলাকায়।
তার প্রথম ক্লাব ছিল আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স।
বিচারের আগে সেখানকার দেয়ালে ‘ডিয়াগোর জন্য ন্যায়বিচার চাই!’ লেখা গ্রাফিতি দেখা যায়।
স্থানীয় এক বৃদ্ধা হিলদা পেরেইরা বলেন, ” society-এর সকলের জানা দরকার, আসলে কি ঘটেছিল, কে তাকে একা ফেলে গিয়েছিল।
দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি হওয়া উচিত।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ম্যারাডোনার এমন একা মৃত্যু হওয়া উচিত হয়নি।
আর্জেন্টিনার বামপন্থী পত্রিকা প্যাগিনা ১২ প্রশ্ন তুলেছে, “ম্যারাডোনার মৃত্যুর জন্য কাউকে কি দোষী সাব্যস্ত করা হবে?”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান