যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার মধ্যে গাড়ি আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত আপাতত এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এই ঘোষণা করেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ তাঁর অর্থনৈতিক পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের সাময়িক পরিবর্তন।
এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে জানা যায়, ফোর্ড, জেনারেল মোটরস এবং স্টেলান্টিস-এর মতো শীর্ষস্থানীয় মার্কিন গাড়ি প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে আলোচনার পরেই ট্রাম্প এই সাময়িক ছাড় দিতে রাজি হন। কোম্পানিগুলোর আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে, শুল্ক পুরোপুরি বাতিল করা হয়নি, বরং তা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
লেভিট জানান, ইউএসএমসিএ (USMCA)-এর সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর অনুরোধের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট তাদের এক মাসের ছাড় দিয়েছেন, যাতে তারা কোনো অর্থনৈতিক অসুবিধায় না পড়ে। ইউএসএমসিএ হলো যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি।
মেক্সিকো ও কানাডার অন্যান্য পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকছে। তবে, লেভিট আরও জানান, ট্রাম্প অন্যান্য শুল্ক ছাড়ের বিষয়েও আগ্রহী থাকবেন। এর আগে তিনি শুল্ক ছাড়ের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছিলেন। এই ঘোষণার পর বুধবার শেয়ার বাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি যেন এই সময়কে কাজে লাগিয়ে আমেরিকার অভ্যন্তরে গাড়ির উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করে। ট্রাম্প চান, আমেরিকার গাড়ি উৎপাদন পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রেই হোক। তবে বিশাল বিনিয়োগ, কর্মী নিয়োগ এবং কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি একটি বড় পদক্ষেপ হবে।
ফোর্ড এক বিবৃতিতে জানায়, তারা তাদের শিল্পের সমস্যাগুলো নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে। জেনারেল মোটরস-এর একজন মুখপাত্র জানান, তাঁরা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছেন। কোম্পানিটি ইউএসএমসিএ কার্যকর হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে এবং প্রতি বছর উৎপাদন খাতে আরও কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে চলেছে। স্টেলান্টিস এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা আমেরিকার অটোমোবাইল সেক্টরের উন্নতি করতে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে জোরালোভাবে সমর্থন করে।
অন্যদিকে, কানাডা এই এক মাসের শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্তে খুশি নয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি পণ্য হলো গাড়ি। অন্টারিও প্রদেশের প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের দেশের পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক আরোপ মেনে নিতে রাজি নন।
উল্লেখ্য, আগামী ২ এপ্রিল ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে পারস্পরিক শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণা করতে পারেন। লেভিট জানিয়েছেন, মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের শুল্কের মতো এই পারস্পরিক শুল্কে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ২ হাজার ১৭০ কোটি ডলার মূল্যের যাত্রী গাড়ি আমদানি করেছে। এর মধ্যে এক পঞ্চমাংশের বেশি এসেছে মেক্সিকো থেকে। যাত্রী গাড়ি রপ্তানির ক্ষেত্রে মেক্সিকোর পরেই ছিল জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা এবং জার্মানির অবস্থান।
গাড়ি শিল্পে মেক্সিকো ও কানাডার গুরুত্ব অনেক। উত্তর আমেরিকার গাড়ি শিল্প কয়েক দশক ধরে কার্যত সীমান্তবিহীনভাবে কাজ করছে, যা বিভিন্ন প্রেসিডেন্টের সময়ে স্বাক্ষরিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ফল। এর ফলে যন্ত্রাংশ এবং সম্পূর্ণ গাড়ি একাধিকবার সীমান্ত অতিক্রম করে মার্কিন ডিলারশিপে পৌঁছায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আসা গাড়ি ও যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক আরোপ করা হলে উত্তর আমেরিকার কারখানাগুলোতে তৈরি গাড়ির উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন