জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত জুলি বিশপকে ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর পরামর্শক সংস্থা এবং মিয়ানমারে কার্যক্রম চালানো কিছু চীনা খনি ও নির্মাণ কোম্পানির মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে, জাতিসংঘের প্রতি জুলি বিশপের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে একটি অধিকার সংস্থা।
‘জাস্টিস ফর মিয়ানমার’ নামের এই সংগঠনটি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে তারা অস্ট্রেলিয়ার ‘দ্য স্যাটারডে পেপার’-এর একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বিশপের সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কিছু কোম্পানির সংযোগের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত, আরও কয়েকটি সংগঠন এই তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
সংস্থাটি জাতিসংঘের মহাসচিবকে লেখা চিঠিতে বলেছে, মিয়ানমারে ব্যবসা করা চীনা ও অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে সংযোগ “অগ্রহণযোগ্য স্বার্থের সংঘাত” তৈরি করে, যার অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত। জাস্টিস ফর মিয়ানমার জাতিসংঘের প্রধানকে বিশপের “ব্যবসায়িক কার্যক্রম” তদন্ত করতে, তাঁর জাতিসংঘের দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার উপযুক্ততা বিবেচনা করতে এবং তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছে।
জুলি বিশপ একসময় অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এবং বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এখনো পর্যন্ত প্রকাশ্যে এই অভিযোগের কোনো জবাব দেননি। তিনি গত এপ্রিল মাসে জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক দূত হিসেবে নিযুক্ত হন। ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’ পত্রিকাকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিশপের কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি একটি “বেসরকারি পরামর্শক সংস্থা, যা কৌশলগত বিশ্লেষণ এবং দিকনির্দেশনা প্রদানের কাজ করে”।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোম্পানিটি “কোনো আর্থিক বা নির্বাহী দায়িত্ব পালন করে না, অথবা কোনো আইনি, কর্পোরেট বা আর্থিক পরামর্শও দেয় না”। তারা আরও জানায়, “কোনো সম্ভাব্য বা বিদ্যমান স্বার্থের সংঘাত থাকলে, তা ঘোষণা করা হয় এবং যাচাই করা হয়।”
২০২১ সালে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশটির রাজস্বের জন্য চীনা-সমর্থিত খনি ও নির্মাণ প্রকল্পের ওপর অনেকখানি নির্ভর করতে হয়। এছাড়া, মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের জন্য চীন একটি প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ।
জাস্টিস ফর মিয়ানমার তাদের চিঠিতে যুক্তি দিয়েছে, ওইসব কোম্পানির সঙ্গে বিশপের সংযোগ, যাদের মিয়ানমারে ব্যবসা রয়েছে, তা জাতিসংঘের দূতের দায়িত্বের পরিপন্থী। বিশেষ করে যখন তাঁর মূল দায়িত্ব হলো দেশটির নাগরিক সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা।
সংস্থাটির মুখপাত্র ইয়াদানার মং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, “মিয়ানমারের নাগরিক সমাজের আস্থা হারানোটা বিশেষ দূতের পদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
‘দ্য স্যাটারডে পেপার’-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশপের পরামর্শক সংস্থা মেলবোর্ন-ভিত্তিক ‘এনার্জি ট্রানজিশন মিনারেলস’-কে পরামর্শ দিয়েছে। এই কোম্পানিটির বিরল মৃত্তিকা খনিজ পদার্থের ব্যবসা রয়েছে এবং এতে চীনের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে, ‘শেংহে রিসোর্সেস’-এর মতো আংশিকভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি সংস্থা রয়েছে, যা মিয়ানমার থেকে বিরল মৃত্তিকা সংগ্রহ করে বলে ধারণা করা হয়।
জাতিসংঘ জাস্টিস ফর মিয়ানমারের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে, তবে এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে এপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা