গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরেও নিহত
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান সংঘাতের পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক। গত ২৪ ঘন্টায় গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত চারজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১৪ জন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার গাজার মধ্যাঞ্চলে ড্রোন হামলায় নিহত হন তিনজন। মঙ্গলবার রাফাহ শহরে ড্রোন হামলায় নিহত হন একজন নারী। এছাড়া, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার জেনিন শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এক নারীসহ তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, জেনিনে বন্দুকযুদ্ধের সময় তারা দুই জন মিলিট্যান্টকে হত্যা করেছে এবং আরও ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়াও, অভিযানকালে তাদের ওপর হামলা চালানোয় তৃতীয় এক মিলিট্যান্টকে তারা হত্যা করে। এসময় অস্ত্র বোঝাই দুটি গাড়িও ধ্বংস করা হয়।
জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গত জানুয়ারিতে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরপরই এই অভিযান শুরু হয়। এতে বহু ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, এবং হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি এখনো দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। ইসরায়েল চায় হামাস তাদের জিম্মিদের অর্ধেক মুক্তি দিক, যার বিনিময়ে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে, হামাস চাইছে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করতে, যেখানে গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ধারণা করা হচ্ছে, হামাসের হাতে এখনো ২৪ জন জীবিত জিম্মি এবং ৩৫ জনের মরদেহ রয়েছে।
এদিকে, প্রতিবেশী সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সিরিয়ায় চলমান সহিংসতা ‘জাতিগত নির্মূলীকরণের’ শামিল। তিনি আরও জানান, সিরিয়ার নতুন ‘জিহাদি শাসনের’ কারণে সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এবং তা প্রতিরোধ করতে ইসরায়েল কাজ করছে।
সিরিয়ার মানবাধিকার বিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, সেখানে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ১,১৩০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৮৩০ জন বেসামরিক নাগরিক।
ইসরায়েল মনে করে, বিদ্রোহীরা সিরিয়ার সামরিক সম্পদ দখল করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া, সিরিয়ার অস্থিতিশীলতা তাদের ভূখণ্ডেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই, ইসরায়েল সিরিয়ার একটি বাফার জোনে সেনা মোতায়েন করেছে এবং দামেস্কের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে নতুন বাহিনীকে প্রবেশ করতে দিতে চাইছে না। মঙ্গলবার ইসরায়েলি বিমান বাহিনী সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়, যার মধ্যে রাডার ও অন্যান্য সরঞ্জাম ছিল।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় চলমান যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪৮,৫০৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১ লক্ষ ১০ হাজারের বেশি মানুষ। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। তবে, ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ১৭ হাজারের বেশি মিলিট্যান্টকে হত্যা করেছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-এর হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।