গ্রিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতা প্রশ্নে বিভক্ত দলগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ জয় হয়েছে। এই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ডকে নিজের করে নেওয়ার আগ্রহ এবং দ্বীপটির স্বাধীনতা কামনার বিষয়টি বিশেষভাবে প্রভাব ফেলেছে। নির্বাচনে জয়ী হওয়া ডেমোক্রাটিক পার্টি স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতিতে বিশ্বাসী।
নির্বাচনে ডেমোক্রাটিক পার্টি ২৯.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে। অন্যদিকে, ইনুইট আটাকাটিগিট এবং সিয়ামুত নামের দুইটি দলের জোট সম্মিলিতভাবে ভোট পেয়েছে ৩৬.১ শতাংশ। ইনুইট আটাকাটিগিট একটি ডেমোক্রেটিক-সমাজতান্ত্রিক দল, যারা মনে করে ডেনমার্কের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জন করা উচিত এবং এর জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন জরুরি। বিরোধী দল নালেরাখ দ্রুত সম্পর্ক ছিন্ন করার পক্ষে ছিল এবং তারা ২৪.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
গ্রিনল্যান্ড, যা খনিজ তেল ও গ্যাসে সমৃদ্ধ একটি স্বশাসিত অঞ্চল, সেখানকার সব রাজনৈতিক দলই ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতা চায়। বিগত কয়েক বছরের নির্বাচনে গ্রিনল্যান্ডের রাজনীতিবিদরা স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেননি।
এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাস্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার আগ্রহ আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এর ফলে দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন – এই তিনটি দেশই আর্কটিক অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, “আমি মনে করি, আমরা যে কোনো উপায়ে এটা পাবো।” এরপর অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো জোর করে অথবা অর্থনৈতিক প্রলোভনের মাধ্যমে দ্বীপটি দখল করতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এমন আগ্রাসী মনোভাবের কারণে ডেনমার্কের সঙ্গে দর কষাকষিতে গ্রিনল্যান্ডের ক্ষমতা বেড়েছে এবং স্বাধীনতা আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে।
ডেনমার্ক ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত গ্রিনল্যান্ডকে উপনিবেশ হিসেবে শাসন করেছে। এরপর দ্বীপটি স্ব-শাসনের বৃহত্তর ক্ষমতা লাভ করে। ২০০৯ সালে খনিজ সম্পদ, পুলিশ ও আদালতের ওপর আরও বেশি ক্ষমতা পায় তারা। তবে নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রানীতি এখনো ডেনমার্কের হাতে। এছাড়াও, গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর সদস্যপদ থেকে উপকৃত হয়।
গ্রিনল্যান্ডের রাজনীতিবিদরা বারবার বলেছেন যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহী নন, তবে বিরল মৃত্তিকা খনন, পর্যটন বৃদ্ধি, শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং অন্যান্য বিনিয়োগের জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করতে প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে গ্রিনল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে।
একটি জরিপে দেখা গেছে, ৮৫ শতাংশ গ্রিনল্যান্ডবাসী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হতে চায় না। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মনে করে, ট্রাম্পের এই আগ্রহ তাদের জন্য হুমকি স্বরূপ।
নালেরাখ দলের প্রার্থী কুপানুক ওলসেন বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমরা খুব শীঘ্রই আমাদের সংস্কৃতি, ভাষা এবং নিজস্ব রীতিনীতির ওপর ভিত্তি করে জীবনযাপন শুরু করব এবং ডেনমার্কের পরিবর্তে আমাদের নিজেদের তৈরি করা নিয়মকানুন অনুযায়ী চলব।”
তথ্যসূত্র: সিএনএন।