বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবিলায় ফ্রান্সের একটি গ্রাফিক নভেল কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
‘ওয়ার্ল্ড উইদাউট এন্ড’ (World Without End) নামের এই কমিকস-ধর্মী বইটি লিখেছেন ফরাসি প্রকৌশলী জ্যাঁ-মার্ক জাঙ্কোভিচি এবং কমিকস শিল্পী ক্রিস্টোফ ব্লেইন।
বইটি মূলত জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর কারণগুলো সহজভাবে তুলে ধরেছে।
জাঙ্কোভিচি ২০০০ সালের শুরুর দিকে কার্বন হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থা তৈরি করেন, যা বর্তমানে ইউরোপের অনেক কোম্পানি তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ নিরীক্ষণে ব্যবহার করে।
এরপর তিনি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন এবং তাঁর ভিডিওগুলো ফ্রান্সে বেশ জনপ্রিয় হয়।
ব্লেইন নামের এক গ্রাফিক নভেল লেখকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় এবং তাঁরা একটি বই লেখার সিদ্ধান্ত নেন।
২০২১ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত ‘লে মঁদ সঁ ফিন’ (Le Monde sans Fin) বা ‘ওয়ার্ল্ড উইদাউট এন্ড’ বইটিতে জাঙ্কোভিচি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর প্রয়োজনীয়তা এবং এই কাজটি কেন কঠিন, তা ব্যাখ্যা করেছেন।
বইটি ২০২২ সালে ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকায় ছিল এবং এর এক মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।
সম্প্রতি, ১১ মার্চ ২০২৩ তারিখে, বইটির ইংরেজি সংস্করণ যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত হয়েছে।
বইটিতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা এবং এর থেকে বেরিয়ে আসার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
জাঙ্কোভিচি মনে করেন, জীবাশ্ম জ্বালানি আধুনিক বিশ্বের ভিত্তি তৈরি করেছে, তাই এটি সহজে ত্যাগ করা সম্ভব নয়।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে এটি ত্যাগ করা অপরিহার্য।
তিনি পারমাণবিক শক্তিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেছেন।
জাঙ্কোভিচির মতে, পারমাণবিক শক্তি কার্বন নিঃসরণ কমায় এবং এটি প্রচলিত ধারণা থেকে অনেক বেশি নিরাপদ।
বইটিতে জীবাশ্ম জ্বালানির পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তির সীমাবদ্ধতা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
জাঙ্কোভিচি মনে করেন, নবায়নযোগ্য শক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবে এটি শিল্পায়িত সমাজের জন্য যথেষ্ট নয়।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শক্তির সংমিশ্রণ প্রয়োজন।
এই বইটির মূল আকর্ষণ হলো, এটি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জটিল বিষয়গুলো সহজ ভাষায় উপস্থাপন করে।
লেখকের মতে, মানুষ এই বইটিকে গ্রহণ করেছে, কারণ এতে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সমস্যাগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা হয়েছে।
এখানে সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাওয়ার পরিবর্তে, কেন এগুলো মোকাবেলা করা কঠিন, তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য এই বইটির শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অনেক বেশি।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, এবং কৃষি জমির ক্ষতি—এসব কারণে আমরা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
এই প্রেক্ষাপটে, কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
ফ্রান্সের এই গ্রাফিক নভেলটি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
এটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, এই সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক