ক্রিকেট ইতিহাসের মোড় ঘোরানো ১০টি স্মরণীয় সেঞ্চুরি
ক্রিকেট খেলাটির জন্ম এবং বিবর্তনের সাক্ষী রয়েছে কিছু অসাধারণ ইনিংস। একদিকে যেমন রয়েছে ব্যাটসম্যানদের অসাধারণ দক্ষতা, তেমনই রয়েছে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা। নিচে তেমনই কয়েকটি স্মরণীয় সেঞ্চুরির কথা তুলে ধরা হলো, যা ক্রিকেট বিশ্বে আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে।
১. প্রথম সেঞ্চুরি: জন মিনশালের কীর্তি (১৭৬৯)
আজ থেকে প্রায় আড়াইশো বছর আগে, ১৭৬৯ সালে জন মিনশালের ব্যাট থেকে এসেছিল ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম সেঞ্চুরি। যদিও এই ইনিংসটি নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে, কারণ সে সময়ের রেকর্ড সেভাবে রাখা হতো না। তবে, ধারণা করা হয়, ডরসেটের ডিউকের দলের হয়ে খেলা মিনশালের এই ইনিংসটি ছিল অসাধারণ। মাঠের ঘাস কাটতেন ভেড়া, বাউন্ডারি ছিল না, এমন পরিস্থিতিতে তিনি এক ইনিংসে করেন ১০৭ রান।
২. নারী ক্রিকেটের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত: এনি বাকেলের সেঞ্চুরি (১৯৬৮)
১৯৬৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে ইংল্যান্ডের নারী ক্রিকেটার এনি বাকেল গড়েছিলেন এক নতুন ইতিহাস। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম মা হিসেবে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি। অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে ১১৩ রান করেন বাকেল। তাঁর এই সেঞ্চুরি শুধু একটি ব্যক্তিগত মাইলফলক ছিল না, বরং নারী ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। সেই সময়ে নারীদের খেলাধুলা করার সুযোগ ছিল খুবই সীমিত, তাই বাকেলের এই সাফল্য সমাজে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
৩. স্ট্যান ম্যাকাবের প্রতিরোধ (১৯৩২)
১৯৩২ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যেকার টেস্ট ম্যাচে স্ট্যান ম্যাকাবের লড়াই আজও ক্রিকেট ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে তাঁর দৃঢ়তা ও অসাধারণ টেকনিক মুগ্ধ করেছিল ক্রিকেট বিশ্বকে। সেই ম্যাচে তিনি ১৮৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন। ব্র্যাডম্যানের অনুপস্থিতিতে একাই যেনো লড়েছিলেন তিনি।
৪. ল্যারি কনস্ট্যান্টাইনের উত্থান (১৯২৮)
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার ল্যারি কনস্ট্যান্টাইন ১৯২৮ সালে মিডলসেক্সের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে ১০৩ রান করেন। এই ইনিংসের মাধ্যমে তিনি শুধু নিজের দক্ষতার প্রমাণ দেননি, বরং ব্রিটিশ সমাজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের সম্মান ও স্বীকৃতির পথ খুলে দেন। তাঁর এই ইনিংসের পরেই নেলসন ক্লাবে খেলার সুযোগ পান তিনি।
৫. কলিন কাউড্রের রক্ষণাত্মক কৌশল (১৯৫৭)
১৯৫৭ সালের একটি টেস্ট ম্যাচে কলিন কাউড্রে এবং পিটার মে-এর ব্যাটিং কৌশল ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার সনি রামাদিনের বোলিংয়ের বিপক্ষে কাউড্রে ৫৩০ বল খেলে করেন ১৫৪ রান। তাঁর এই রক্ষণাত্মক ব্যাটিং কৌশল অনেক সমালোচনার জন্ম দিলেও, ক্রিকেটে টিকে থাকার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
৬. ভিভ রিচার্ডসের বিধ্বংসী ইনিংস (১৯৮৪)
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৮৪ সালের ওয়ানডে ম্যাচে ভিভ রিচার্ডসের ১৮৯ রানের অসাধারণ ইনিংস ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা একটি উদাহরণ। শুকনো উইকেটে তিনি একাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর এগিয়ে নিয়ে যান। তাঁর মারকুটে ব্যাটিংয়ের সামনে অসহায় হয়ে পরেছিলেন ইংলিশ বোলাররা।
৭. ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ঝড়ো ইনিংস (২০০৮)
২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম ম্যাচে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ১৫৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে এটি ছিল এক নতুন দিগন্ত। তাঁর ব্যাটিংয়ের আগ্রাসন ও দ্রুত রান তোলার ক্ষমতা ক্রিকেটপ্রেমীদের মন্ত্রমুগ্ধ করে তুলেছিল।
৮. গ্রাহাম ইয়ালপের হেলমেট পরা (১৯৭৮)
১৯৭৮ সালে গ্রাহাম ইয়ালপ টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে হেলমেট পরে খেলতে নামেন। ফাস্ট বোলারদের বাউন্সারের বিরুদ্ধে নিজের সুরক্ষার জন্য তাঁর এই সিদ্ধান্তটি ছিল যুগান্তকারী। তাঁর এই পদক্ষেপের পরেই খেলার মাঠে হেলমেটের ব্যবহার বাড়ে এবং এটি ক্রিকেটের একটি অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়।
৯. আলফ্রেড মিনের বীরত্বপূর্ণ সেঞ্চুরি (১৮৩৬)
১৮৩৬ সালে নর্থ বনাম সাউথের একটি ম্যাচে আলফ্রেড মিনের ১২৫ রানের ইনিংস আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। খেলার সময় পাওয়া একটি গুরুতর আঘাত নিয়েও তিনি যেভাবে ব্যাট করে যান, তা ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।
১০. হারমানপ্রীত কৌরের ঝলমলে ইনিংস (২০১৭)
২০১৭ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হারমানপ্রীত কৌরের ১৭১ রানের অসাধারণ ইনিংস নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় যোগ করে। তাঁর এই বিধ্বংসী ব্যাটিং ভারতকে ফাইনালে পৌঁছে দেয় এবং নারী ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে তোলে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান