যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মী ছাঁটাই: আশঙ্কা বাড়ছে, জড়িত এলন মাস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মীদের সংখ্যা কমানোর একটি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কর্মীদের ছাঁটাইয়ের এই প্রক্রিয়ায় বিতর্কিতভাবে যুক্ত হয়েছেন প্রযুক্তি ব্যবসায়ী এলন মাস্ক। বিষয়টিকে অনেকে “সরকারি সম্পদের অগ্নিসংযোগ” হিসেবেও অভিহিত করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে পাবলিক সার্ভিসের পার্টনারশিপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ম্যাক্স স্টাইর বলেছেন, সরকার যদি একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে কর্মী ছাঁটাই করত, তাহলে হয়তো ভিন্ন কথা ছিল। কিন্তু এখানে মনে হচ্ছে, কোনো নিয়ম-নীতি ছাড়াই এই কাজ করা হচ্ছে। তাঁর মতে, এটা অনেকটা “লক্ষ্য স্থির করার আগেই গুলি ছোড়ার” মতো।
স্টাইর মনে করেন, সরকারি কর্মীদের ছাঁটাইয়ের এই প্রক্রিয়া দেশের নাগরিকদের জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, সরকার জনগণের সম্পদ। তিনি বলেন, “আমরা এখন একটি সরকারি সম্পদের অগ্নিসংযোগ দেখছি, যা আমাদের ফেডারেল সরকার।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে একটি নিয়ম চলে আসছে, যেখানে মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে কর্মীদের ছাঁটাইয়ের ফলে সেই ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে অনেকে মনে করছেন। স্টাইরের মতে, সরকারে আধুনিকীকরণ প্রয়োজন, তবে এখন যা হচ্ছে, তা ভুল পথে হাঁটা।
কর্মীদের ছাঁটাইয়ের কারণ হিসেবে ডাইভারসিটি, ইক্যুইটি, এবং ইনক্লুশন (DEI) প্রোগ্রাম বাতিলের কথা বলা হচ্ছে। যদিও স্টাইর বলছেন, কর্মীদের ছাঁটাইয়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি জানান, নতুন কর্মীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হচ্ছে, যা কোনো সুসংহত পরিকল্পনা ছাড়াই করা হচ্ছে। এমনকি, যারা সরকারের অপচয়, দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে কাজ করেন, সেই ইন্সপেক্টর জেনারেলদেরও বরখাস্ত করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের আইনি লড়াইয়ের সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে স্টাইর বলেন, এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
কর্মকর্তারা বলছেন, এলন মাস্কের এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়া নজিরবিহীন। কারণ, তাঁর ব্যক্তিগত আর্থিক স্বার্থ এখানে জড়িত। তিনি সরাসরি সরকারের নীতিনির্ধারণের সঙ্গে জড়িত হচ্ছেন, যেখানে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। স্টাইরের মতে, সরকারের ক্ষমতা প্রয়োগ জনগণের কল্যাণে হওয়া উচিত, কোনো ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থে নয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি কর্মী ছাঁটাইয়ের এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকারের কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়বে। এর ফলে জনগণের অর্থেরও অপচয় হবে। কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং নিয়োগের পেছনে যে অর্থ খরচ হয়েছে, তা সবই জলে যাবে। উদাহরণস্বরূপ, নতুন একজন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিতে প্রায় ৫,০০০ মার্কিন ডলার খরচ হয়।
মোটকথা, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মী ছাঁটাইয়ের এই প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন