ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরিয়ে পূর্ব আফ্রিকায় পাঠাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল: প্রতিবেদন
যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল, ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে বিতাড়িত করে সুদান, সোমালিয়া এবং এর বিচ্ছিন্ন অঞ্চল সোমালিল্যান্ডে পুনর্বাসনের বিষয়ে তিনটি পূর্ব আফ্রিকান দেশের সঙ্গে আলোচনা করেছে। সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর বরাত দিয়ে এমনটাই জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুদানের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। অন্যদিকে, সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডের কর্মকর্তারা এ ধরনের কোনো আলোচনার বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে, তারা আলোচনার বিস্তারিত জানাননি। একই সঙ্গে, মার্কিন কর্মকর্তারা সুদানের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাদের মতে, আলোচনার অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে বা ঠিক কোন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এই ঘটনা এমন এক সময়ে সামনে এসেছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক মাস আগে গাজা উপত্যকা “জবরদখল” করে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার প্রস্তাব করেছিলেন। ফিলিস্তিনি এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে। অনেক দেশ একে জাতিগত নিধনের শামিল হিসেবেও উল্লেখ করেছে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, গত মাসে ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের কয়েকদিন পরেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল পৃথকভাবে সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। ইসরায়েল এই আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছে বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ফিলিস্তিনিদের “স্বেচ্ছায়” অন্য দেশে চলে যাওয়ার সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তিনি জানিয়েছেন, ইসরায়েল বর্তমানে ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করতে পারে এমন দেশ চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। এছাড়াও, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি “বৃহৎ অভিবাসন বিভাগ” তৈরির প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক তামের কারমুত আল জাজিরাকে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বিতাড়ন “লঙ্ঘনযোগ্য একটি সীমা”। তিনি আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোর এই “আপত্তিকর” প্রস্তাব বন্ধ করার দায়িত্ব রয়েছে এবং বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোতে ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করা উচিত নয়। কারণ, এই দেশগুলোর অনেকই এখনো ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাব থেকে মুক্তি পায়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের গ্রহণ করার বিনিময়ে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোকে আর্থিক, কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হতে পারে।
এই বিষয়ে জড়িত একজন মার্কিন কর্মকর্তা এপিকে নিশ্চিত করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে “এমন কিছু ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করছে, যেখানে তারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সহযোগী হতে পারে এবং এর বিনিময়ে স্বীকৃতি পেতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্র, সোমালিল্যান্ডকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করতে পারে। সোমালিল্যান্ডের নতুন প্রেসিডেন্ট আবদিরহমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহি-র জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অন্যদিকে, কেন সোমালিয়া ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দিতে চাইবে, তা বোঝা কঠিন। কারণ, দেশটি ফিলিস্তিনের স্ব-নিয়ন্ত্রণের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানায়। এমনটাই জানিয়েছেন নাইরোবি-ভিত্তিক আইনজীবী ও সংঘাত গবেষক সাম্বু চেপকোরির।
দুজন সুদানি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করার বিষয়ে সামরিক নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তাদের মধ্যে একজন জানিয়েছেন, ট্রাম্পের ক্ষমতাগ্রহণের আগে থেকেই এই যোগাযোগ শুরু হয়েছিল। তখন, আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ-এর বিরুদ্ধে সামরিক সহায়তা, যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনে সহায়তা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
উভয় কর্মকর্তাই জানিয়েছেন, সুদানের সরকার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের একজন বলেন, “এই প্রস্তাবটি সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যাখ্যান করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আর কোনো আলোচনা হয়নি।”
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা