সোনার দামে নতুন রেকর্ড, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ
আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম প্রথমবারের মতো ৩,০০০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩,৩০,০০০ টাকা, ডলার প্রতি ১১০ টাকা ধরে) অতিক্রম করেছে। শুক্রবার এই রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপদ বিনিয়োগের প্রবণতা বৃদ্ধি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলারের দুর্বল অবস্থাই এই দাম বাড়ার মূল কারণ।
**সোনার দাম বৃদ্ধির কারণসমূহ**
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়েছে। ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে শুল্ক আরোপের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মদজাত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্কের হুমকি এই অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্যকে ব্যাহত করছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধও সোনার দাম বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের ফলে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের কারণ। যুদ্ধের দীর্ঘসূত্রিতা সোনার দামকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন, যার ফলস্বরূপ সোনার চাহিদা বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও তাদের রিজার্ভে সোনা জমা করছে। বিশেষ করে, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সোনার মজুদ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।
**ডলারের দুর্বলতা ও সোনার বাজারের প্রভাব**
ডলারের দুর্বল অবস্থাও সোনার দাম বাড়াতে সহায়ক হয়েছে। সাধারণত, সোনার দাম ডলারে নির্ধারিত হয়। ডলার দুর্বল হলে, অন্যান্য দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য সোনা কেনা সহজ হয়, ফলে তারা বেশি সোনা কিনতে আগ্রহী হয়। এর ফলে সোনার চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং দামও বাড়ে।
**বাংলাদেশের বাজারে প্রভাব**
আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়তে পারে। সাধারণত, আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের বাজারেও সোনার দাম বাড়ে। এই পরিস্থিতিতে, বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিওতে সোনার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারেন। যদিও এটি বাজারের একটি সাধারণ নিয়ম, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের সচেতন থাকতে হবে এবং তাদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তথ্যসূত্র: সিএনএন