কিউবায় ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাট, অন্ধকারে কোটি মানুষ
শুক্রবার সন্ধ্যায় কিউবার জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে, যার ফলে দেশটির কোটি কোটি মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। রাজধানী হাভানার দিয়েজমেরো সাবস্টেশনে ত্রুটির কারণে স্থানীয় সময় রাত ৮টা ১৫ মিনিটে এই বিপর্যয় শুরু হয়, যা পুরো দ্বীপ জুড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। দেশটির বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা ইউনিয়ন ইলেক্ট্রিকা (ইউএনই) জানিয়েছে, শনিবার সকাল পর্যন্ত তারা চাহিদার ১০ শতাংশেরও কম, অর্থাৎ প্রায় ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছিল।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে হাসপাতালসহ জরুরি পরিষেবাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টা চলছে। কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়ায-কানেল জানিয়েছেন, কিছু প্রদেশে বিকল্প সার্কিট স্থাপন করা হয়েছে এবং জেনারেটর ইউনিটগুলোকে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সমন্বিত করার চেষ্টা চলছে। প্রায় ৯৭ লক্ষ মানুষের এই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে এর আগেও গত বছরের শেষ মাসগুলোতে তিনবার দেশব্যাপী ব্ল্যাকআউট হয়েছিল, যার মধ্যে দুটির স্থায়িত্ব ছিল কয়েক দিন।
এ বছর এটিই প্রথম বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এমন এক সময়ে এই ঘটনা ঘটল, যখন দেশটি গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে কিউবা দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলার ভর্তুকিযুক্ত তেলের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু ভেনেজুয়েলার নিজস্ব অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে সেই সরবরাহ এখন অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। রাজধানী হাভানার বাসিন্দা অ্যাবেল বোনে রয়টার্সকে বলেন, “এখন কেউ জানে না কবে বিদ্যুৎ ফিরবে।”
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে হাভানার বাসিন্দারা এমনিতেই দিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছিলেন। রাজধানী থেকে দূরে অন্যান্য অঞ্চলের মানুষজন গত কয়েক সপ্তাহে দিনে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্ল্যাকআউটের সম্মুখীন হয়েছেন। হাভানার আইসক্রিম বিক্রেতা ৩২ বছর বয়সী কারেন গুতেরেস এএফপিকে বলেন, “আমার আল্লাহ, এটা খুবই খারাপ, আমাদের একটি অন্ধকার সপ্তাহান্ত কাটতে হবে।”
পূর্বাঞ্চলীয় হোলগুইন প্রদেশের ৬৭ বছর বয়সী বাসিন্দা আন্দ্রেস লোপেজ জানান, তিনি এত দ্রুত আবারও ব্ল্যাকআউট আশা করেননি। তিনি বলেন, “বিষয়টি আমাকে সত্যিই বিরক্ত করছে। দেখা যাক, তারা কবে বিদ্যুৎ ফেরাতে পারে।”
কিউবা তাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাগুলোকে দায়ী করে। তাদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে আর্থিক লেনদেন এবং জ্বালানি ও যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিউবার কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছিলেন এবং নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করেছিলেন।
বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলায় কিউবা চলতি বছরের শেষ নাগাদ চীনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে কমপক্ষে ৫৫টি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা করছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এই কেন্দ্রগুলো থেকে প্রায় ১,২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে, যা জাতীয় চাহিদার প্রায় ১২ শতাংশ।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা