যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্টের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে তীব্র বিমান হামলা হয়েছে।
উভয় দেশই শনিবার তাদের ভূখণ্ডে প্রতিপক্ষের একশটির বেশি ড্রোন হামলার খবর দিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন দূতের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের পরেই এই হামলাগুলো চালানো হয়, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধের একটি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।
বৃহস্পতিবারের এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে নীতিগতভাবে সমর্থন জানালেও এর আগে কিছু বিষয় স্পষ্ট করার কথা বলেন।
যদিও ইউক্রেন এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে তারা মস্কোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের (Keir Starmer) আয়োজনে পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে ভার্চুয়াল আলোচনার পর শনিবার কিয়েভে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (Volodymyr Zelenskyy) দীর্ঘমেয়াদী শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য ৩০ দিনের পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানান।
তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে রাশিয়া শর্ত আরোপ করে আলোচনা বানচাল করার চেষ্টা করতে পারে।
স্টারমার মিত্রদের প্রতি পুতিনের ওপর যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার জন্য চাপ অব্যাহত রাখতে বলেছেন এবং ইউক্রেনকে শান্তির পক্ষে শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, পুতিনকে “আজ না হয় কাল” আলোচনা টেবিলে আসতেই হবে।
এর আগে শনিবার এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি মস্কোর বিরুদ্ধে সীমান্ত বরাবর সেনা সমাবেশের অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “রাশিয়ার সেনা সমাবেশ ইঙ্গিত দেয় যে তারা কূটনীতিকে উপেক্ষা করতে চাইছে। এটা স্পষ্ট যে রাশিয়া যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে।”
তবে জেলেনস্কি আরও জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়া যদি মার্কিন প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি না হয়, তাহলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন “নির্দিষ্ট, কঠোর এবং সরাসরি” প্রতিক্রিয়া জানাবে।
তিনি আরও জানান, রাশিয়ার কুরস্ক (Kursk) অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনারা তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে।
এর আগে শুক্রবার ট্রাম্প বলেছিলেন যে “হাজার হাজার” ইউক্রেনীয় সেনা রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
জেলেনস্কি বলেন, “কুরস্ক অঞ্চলের নির্দিষ্ট এলাকাগুলোতে আমাদের সেনাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সেনারা কুরস্ক অঞ্চলে রাশিয়ান ও উত্তর কোরীয় সেনাদের প্রতিহত করে চলেছে। আমাদের সেনাদের কোনো অবরোধ করা হয়নি।”
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, শনিবার রাতে রাশিয়া তাদের দেশের ওপর ১৭৮টি ড্রোন এবং দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
এই হামলায় শাহেদ-শ্রেণীর ড্রোন এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত করার জন্য তৈরি করা নকল ড্রোন ব্যবহার করা হয়।
এর মধ্যে ১৩০টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে এবং আরও ৩৮টি তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দেশটির বেসরকারি জ্বালানি সংস্থা ডিটিইকের (DTEK) এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক (Dnipropetrovsk) এবং ওডেসা (Odesa) অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামোতে আঘাত হানা হয়েছে, যার ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।”
এতে কিছু এলাকার বাসিন্দারা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছেন।
ডিটিইকের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, “ক্ষতি উল্লেখযোগ্য। ইতোমধ্যে জ্বালানি কর্মীরা ঘটনাস্থলে কাজ করছেন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব বাড়িগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করার চেষ্টা করছি।”
অন্যদিকে, রাশিয়ার ভলগোগ্রাদ (Volgograd) অঞ্চলের ক্রাসনোর্মেইস্কি (Krasnoarmeysky) জেলার একটি লুকোয়েল (Lukoil) তেল শোধনাগারের কাছে ড্রোন ধ্বংসাবশেষ থেকে আগুন লেগেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরের কার্যক্রমও কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল।
তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ভলগোগ্রাদ তেল শোধনাগারটি এর আগেও কিয়েভের বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছে।
বিশেষ করে, রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে, সবশেষ গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি ড্রোন হামলার শিকার হয় এটি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)