গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন করে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। হামাস তাদের অবস্থানে অনড় থাকায় এবং ইসরায়েলি বিমান হামলার কারণে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহ পার হলেও, ইসরায়েল দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর করতে চাইছে না। দ্বিতীয় ধাপে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, হামাসের হাতে থাকা সকল জিম্মির মুক্তি এবং যুদ্ধের চূড়ান্ত সমাপ্তি আসার কথা ছিল।
বর্তমানে, উভয় পক্ষই সরাসরি যুদ্ধে জড়ানো থেকে বিরত রয়েছে। তবে ইসরায়েল গাজায় বিমান হামলার সংখ্যা বাড়িয়েছে। এতে বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তাদের দাবি, নিহতরা হয় জঙ্গি ছিল, অথবা তারা অননুমোদিত এলাকায় প্রবেশ করেছিল, কিংবা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।
শনিবার, উত্তর গাজায় দুটি বিমান হামলায় ৯ জন নিহত হয়। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, প্রথম হামলাটি চালানো হয় যখন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক মাহমুদ আসলিম একটি দাতব্য সংস্থার হয়ে তাঁবু তৈরির জন্য সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে ড্রোন ব্যবহার করছিলেন। দ্বিতীয় হামলাটি হয় প্রথম হামলায় আহতদের সরিয়ে নেওয়ার সময় একটি গাড়িতে।
ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের সুরক্ষা কেন্দ্র জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে তিনজন সাংবাদিকও ছিলেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা প্রথমে ড্রোন পরিচালনা করা দুই ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়, যারা ওই এলাকার সেনাদের জন্য হুমকি ছিল। এরপর, ড্রোন সরঞ্জমাদিসহ লোকজনের ওপর আরেকটি হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলি বাহিনী তাদের সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তবে কোনো প্রমাণ পেশ করেনি।
হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে “পরিকল্পিতভাবে হত্যার” অভিযোগ এনেছে। তাদের মতে, এর উদ্দেশ্য হলো “যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে দুর্বল করা এবং জিম্মি বিনিময়ের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করা।” হামাস মধ্যস্থতাকারী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখাচ্ছে বলেও তারা মন্তব্য করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ১৯ জন নিহত হয়েছে। ১৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮,৫০০ জনের বেশি, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। হামাসের হাতে এখনও ৫৯ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৫ জন মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, তারা জীবিত মার্কিন-ইসরায়েলি জিম্মি, ২১ বছর বয়সী এডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দিতে রাজি আছে, যদি ইসরায়েল জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র শুক্রবারের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা হামাসের বিরুদ্ধে “অবাস্তব” দাবি করে সময়ক্ষেপণের অভিযোগ এনেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীতে (আইডিএফ) সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করা আলেকজান্ডারকে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় অপহরণ করা হয়। ওই হামলায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক। বর্তমানে গাজায় আটক থাকা জীবিত মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে আলেকজান্ডার একজন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় শুক্রবার হামাসের বিরুদ্ধে “মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের” অভিযোগ এনেছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি কয়েক সপ্তাহ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে একটি স্থায়ী চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করা যায়। তারা আরও জানায়, হামাস প্রকাশ্যে নমনীয়তার কথা বললেও, গোপনে “পুরোপুরি অবাস্তব” দাবি জানাচ্ছে। কাতার ও মিশরে এই বিষয়ে পরোক্ষ আলোচনা চলছে, যা আগামী সপ্তাহেও অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইসরায়েল গত দুই সপ্তাহ ধরে গাজার প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনির জন্য খাদ্য, জ্বালানি এবং অন্যান্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এক সপ্তাহ আগে তারা গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ করে দেয়। তারা হামাসকে নতুন প্রস্তাব মেনে নিতে চাপ দিচ্ছে। তবে হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েল অবরোধ তুলে নিলে, গাজার সঙ্গে মিশরের সীমান্ত করিডোর থেকে সেনা প্রত্যাহার করলে এবং আরও ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিলে তারা জিম্মিদের মুক্তি দেবে।
যুদ্ধ গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস করে দিয়েছে এবং অধিকাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ২৫ জন ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি এবং আটজনের মরদেহ বিনিময়ের বিনিময়ে প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। ইসরায়েলি বাহিনী গাজার সীমান্ত বরাবর একটি বাফার জোনে সরে আসে এবং মানবিক সহায়তা পাঠানোর অনুমতি দেয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান