পশ্চিম আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্ট-এ জঙ্গিগোষ্ঠীর বিস্তার রোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সাহেল অঞ্চলে সহিংসতা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। যার ফলস্বরূপ, হাজার হাজার মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য হ্রাস করার সিদ্ধান্তের ফলে আইভরি কোস্টের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, দেশটির উত্তরাঞ্চলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং জঙ্গিবাদ দমনে সহায়তার জন্য যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছিল, তা এখন হুমকির মুখে।
এক সময় এই অঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে প্রায় ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের।
কিম্বিরিলা-নর্ড গ্রামটি আইভরি কোস্টের সীমান্তবর্তী একটি এলাকা। এখানকার অধিবাসীরা মনে করেন, সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা এক প্রকার পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছেন। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের এই সহায়তা তাদের যুবকদের প্রশিক্ষণ, গবাদি পশুর জন্য চারণভূমি তৈরি এবং তথ্য আদান-প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা করত।
এর ফলে স্থানীয় জনজীবন জঙ্গিদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেত।
দারিদ্র্য ও ক্ষুধার কারণে যুবকেরা সহজেই জঙ্গিবাদের দিকে আকৃষ্ট হয়। ২০২০ সালে পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ ছিল। সঠিক সময়ে এই প্রকল্পের কারণে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছিলাম।
সাহেল অঞ্চলে গত এক দশকে জঙ্গি বিদ্রোহ ও সামরিক অভ্যুত্থান বেড়েছে। আল-কায়েদা এবং আইএস-এর মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো বিশাল এলাকা দখল করে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এমনকি আইভরি কোস্ট, বেনিন ও টোগোর মতো অপেক্ষাকৃত ধনী উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলোতেও তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে।
জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আইভরি কোস্ট সাহেল অঞ্চলের সন্ত্রাসী হুমকির বিরুদ্ধে এখনো প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সীমান্ত এলাকার মানুষগুলোকে সহায়তা করা না হলে, সামান্য একটি ঘটনাও তাদের জঙ্গিদের দিকে ঠেলে দিতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈদেশিক সাহায্য হ্রাসের ঘোষণার ফলে আইভরি কোস্টের এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি সাহায্যকে অপচয় ও একটি বিশেষ রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবেও অভিযুক্ত করেছেন।
২০২০ সালে যখন জঙ্গিরা ১০ কিলোমিটার দূরের একটি মালীয় গ্রামে হামলা চালায়, তখন কিম্বিরিলা-নর্ড গ্রামটি জঙ্গিবাদীদের জন্য একটি সহজ লক্ষ্য ছিল। এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে মালির নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল গভীর।
সীমান্ত পারাপার সহজ হওয়ায় জঙ্গিরাও খুব সহজে গ্রামে প্রবেশ করতে পারত। গ্রামবাসীদের অনেকেরই পরিচয়পত্র ছিল না এবং তারা ফরাসি বলতে পারত না। ফলে তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল।
জঙ্গিদের আক্রমণের সময় আমরা খুব ভয় পেয়েছিলাম। তখন সবাই নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পটি গ্রামবাসীদের জন্য প্রশিক্ষণ, অনুদান এবং ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা করেছিল। এছাড়াও, কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে স্থানীয় ভাষায় তথ্যের আদান-প্রদান এবং পরিচয়পত্র তৈরি করতে সহায়তা করা হত।
এই প্রকল্পের কারণেই আমরা এখন রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারি। আমরা একসঙ্গে থাকতে শিখেছি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস