ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা, শিন বেটের প্রধানকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের জেরে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদের অভিযোগ আরও বাড়ছে।
সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু জানান, শিন বেটের প্রধান রোনেন বার-এর সঙ্গে তার ‘চলমান আস্থার অভাব’ তৈরি হয়েছে, যে কারণে তিনি একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন না।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা আমাদের টিকে থাকার জন্য এক কঠিন যুদ্ধের মধ্যে আছি। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর অবশ্যই শিন বেটের প্রধানের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা থাকতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, পরিস্থিতি এখন বিপরীত।’
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের অপ্রত্যাশিত হামলার পর নিরাপত্তা ব্যর্থতা নিয়ে নেতানিয়াহু ও বার-এর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এই হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়েছিল, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক।
এছাড়াও ২৫১ জনকে অপহরণ করা হয়। শিন বেট হলো ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠীর ওপর নজরদারির দায়িত্বে থাকা একটি সংস্থা। হামলার কারণ অনুসন্ধানে শিন বেট তাদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
তবে তারা সরকারের নীতিকেও এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী করে। যদিও নেতানিয়াহু এই হামলার কোনো দায় নিতে রাজি হননি। তিনি তখনো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং বর্তমানে ১৭ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন।
নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপে তার কট্টর ডানপন্থী মিত্ররা স্বাগত জানিয়েছে। সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির একে ‘দেরিতে হলেও ভালো’ বলে মন্তব্য করেছেন।
অন্যদিকে, বিরোধী দলের নেতা ইয়াইর লাপিদ বার-কে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক বলেছেন, নেতানিয়াহু ‘নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন’ এবং ‘আইনের শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছেন’।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, কাতার থেকে হামাসকে আসা বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা নেতানিয়াহু অনুমোদন করেছিলেন। অনেকে মনে করেন, এর মাধ্যমে গাজায় ফিলিস্তিনের রামাল্লা ভিত্তিক কর্তৃপক্ষের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠীটিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হয়েছে।
বার-এর পূর্বসূরি নাদাভ আর্গামান সম্প্রতি বলেছেন, নেতানিয়াহু যদি আইন ভেঙে থাকেন, তবে তিনি তার বিরুদ্ধে সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করবেন। এর পরেই উত্তেজনা আরও বাড়ে।
নেতানিয়াহু আর্গামানের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ এনে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
শিন বেট তাৎক্ষণিকভাবে নেতানিয়াহুর ঘোষণার প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে বার এক বিবৃতিতে বলেছেন, শিন বেটের প্রধান হিসেবে তিনি ‘প্রথম এবং সর্বাগ্রে ইসরায়েলের নাগরিকদের’ কাছে দায়বদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত আনুগত্যের প্রত্যাশা ‘জনস্বার্থের পরিপন্থী এবং মৌলিকভাবে ভুল’। বার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিশন গঠনেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
নেতানিয়াহু অবশ্য বারবার ২০২৩ সালের হামলার বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি এই ব্যর্থতার জন্য সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে দায়ী করার চেষ্টা করছেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে হয় বরখাস্ত করা হয়েছে, অথবা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। বার এখনো বহাল থাকা অল্প কয়েকজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তার একজন।
বারকে যদি সরানো হয়, তাহলে তার স্থানে নেতানিয়াহু একজন অনুগত ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে পারেন, যা তদন্ত কমিশনের সম্ভাবনাকে দুর্বল করে দেবে।
নেতানিয়াহু বলেছেন, বারকে সরানোর ফলে ইসরায়েল ‘যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করতে এবং পরবর্তী বিপর্যয়’ রোধ করতে পারবে।
শিন বেট-এর পক্ষ থেকে নেতানিয়াহুর কর্মীদের কাতার থেকে আসা অর্থের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছিল। লাপিদের অভিযোগ, বারকে সরানোর মূল উদ্দেশ্য হলো এই তদন্তকে নস্যাৎ করা।
গাজায় চলমান যুদ্ধকালে জিম্মি মুক্তির আলোচনায় শিন বেট এবং বার ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। তবে সম্প্রতি নেতানিয়াহু আলোচনার এই দল থেকে বারকে সরিয়ে তার জায়গায় একজন অনুগত মন্ত্রীকে নিয়োগ করেছেন।
কর্তৃত্ববাদী হিসেবে ব্যাপকভাবে সমালোচিত বিচার বিভাগীয় সংস্কারের চেষ্টা হামাসের হামলার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই পদক্ষেপগুলো ইসরায়েলের রাজনীতিকে বিভক্ত করে দিয়েছে এবং দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান