যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন আক্রমণের তদন্ত বিষয়ক আন্তর্জাতিক কেন্দ্র থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে। খবরটি এমন সময়ে এলো যখন হোয়াইট হাউস সম্ভবত রাশিয়ার প্রতি নমনীয় একটি অবস্থান নিতে যাচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ক এই কেন্দ্রটি (International Centre for the Prosecution of the Crime of Aggression against Ukraine – ICPA) গঠিত হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া এবং ইরানের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, যারা ইউক্রেন আক্রমণের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে।
বাইডেন প্রশাসন এই কেন্দ্রকে এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার ঘোষণা করেছিল এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের জন্য পুতিনের জবাবদিহিতা চেয়েছিল। সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড বলেছিলেন, “ইউক্রেনের জনগণের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অবিচল থাকবে, যখন তারা রাশিয়ার বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য লড়ছে।”
তবে বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সংস্থা, ইউরো জাস্ট (Eurojust)-এর প্রেসিডেন্ট মাইকেল স্কিড এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই কেন্দ্র থেকে সরে আসার বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে।
তবে কেন্দ্রের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন একটি কারণ হতে পারে।
জানা যায়, ওয়াশিংটন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছে। এর আগে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে প্রকাশ্যে তিরস্কার করেছিলেন এবং ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তা স্থগিত করা হয়েছিল।
যদিও পরে যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভের যুদ্ধবিরতির আহ্বানে সমর্থন জানালে সেই সহায়তা পুনরায় চালু করা হয়। ট্রাম্প এর আগে জেলেনস্কিকে ‘নির্বাচনবিহীন একনায়ক’ হিসেবেও অভিহিত করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, তারা যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক তাদের দলের কার্যক্রমও কমিয়ে দিচ্ছে।
এই দল ২০২১ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার নৃশংসতার তদন্তের জন্য গঠন করা হয়েছিল। গারল্যান্ড সে সময় বলেছিলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের লুকানোর কোনো জায়গা নেই।”
সেই দল ইউক্রেনের আইনজীবীদের লজিস্টিক্যাল সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং সরাসরি সহযোগিতা প্রদান করত। ইউক্রেনের আইনজীবীরা বর্তমানে ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করছেন।
এর মধ্যে বন্দীদের নির্বিচারে হত্যা, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমা হামলা এবং নির্যাতনের মতো ঘটনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান