যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে কলম্বিয়াকে দেওয়া মার্কিন সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে দেশটির অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় যে গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, সম্প্রতি তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ভেনেজুয়েলা থেকে আসা বিপুল সংখ্যক অভিবাসীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল কলম্বিয়া।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে কলম্বিয়ার সরকার তাদের অভিবাসন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় অর্থ ও অবকাঠামোগত সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়।
এর ফলস্বরূপ, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া এবং তাদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে চরম সংকট তৈরি হয়। কলম্বিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে স্থান সংকুলান কমে যায়, খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবার মতো জরুরি পরিষেবাগুলোতেও দেখা দেয় ঘাটতি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ট্রাম্পের আমলে সহায়তা বন্ধের আগে কলম্বিয়া সরকার অভিবাসন ব্যবস্থাপনার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আর্থিক সাহায্য পাচ্ছিলো। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র কলম্বিয়াকে অভিবাসন বিষয়ক কার্যক্রমের জন্য প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৩০ কোটি টাকা) সহায়তা দিয়েছিল।
কিন্তু এই সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, কলম্বিয়াকে একাই এই বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।
ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক সংকট সেখানকার নাগরিকদের কলম্বিয়ায় যেতে বাধ্য করে। কলম্বিয়া সরকার তাদের আশ্রয় দিলেও, পর্যাপ্ত সহায়তার অভাবে শরণার্থীদের জীবনযাত্রার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অনেক শরণার্থী মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হয় এবং এর ফলে কলম্বিয়ার সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অভিবাসন সমস্যা একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। তাই কোনো দেশের একার পক্ষে এর সমাধান করা সম্ভব নয়।
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। কলম্বিয়ার ঘটনা থেকে বোঝা যায়, শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ করে দিলে তা কেবল একটি দেশের জন্য নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
বর্তমানে, অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং মানবাধিকার সংগঠন কলম্বিয়ার অভিবাসন পরিস্থিতি উন্নয়নে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। তবে, এই সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ করা জরুরি।
একইসঙ্গে, ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা