প্রযুক্তি বিশ্বের ‘নেতা’ এবং তাদের প্রভাব: একটি পর্যালোচনা।
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের জীবনযাত্রায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, স্মার্টফোন – এসব আবিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্ব যেন মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে।
প্রযুক্তির এই অভাবনীয় উত্থানে কিছু মানুষের প্রভাবশালী হয়ে ওঠাটাও স্বাভাবিক। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন প্রযুক্তিবিদ এবং প্রকৌশলী, যাদের প্রায়ই ‘নার্ড’ বা প্রযুক্তি-পাগল হিসেবে অভিহিত করা হয়।
তবে, এই ‘নার্ড’দের উত্থান এবং তাদের প্রযুক্তির জয়জয়কারের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।
প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করেছে, এবং তথ্য আদান-প্রদানকে সহজ করেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু এই প্রযুক্তির উন্নতি কি সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করেছে? প্রযুক্তি কি সবসময়ই সমাজের ভালোর জন্য কাজ করে?
যদি আমরা একটু গভীরে যাই, তাহলে দেখব, প্রযুক্তির এই উন্নতির পেছনে রয়েছে কিছু প্রভাবশালী প্রযুক্তি কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য।
এই কোম্পানিগুলোর প্রধান ব্যক্তিরা, যাদের আমরা ‘নার্ড’ হিসেবে চিনি, তারা তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং বিপুল অর্থ দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিকে প্রভাবিত করছেন।
উদাহরণস্বরূপ, এলন মাস্কের কথা বলা যায়, যিনি একদিকে যেমন স্পেসএক্স এবং টেসলার মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতীক, তেমনই আবার বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে সমালোচিতও হন।
এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রায়ই তাদের প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে সমাজের ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করেন।
তারা দাবি করেন, তাদের তৈরি করা প্রযুক্তি বিশ্বকে আরও উন্নত করবে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করবে। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence বা AI), এবং অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার কি সবসময়ই ইতিবাচক ফল বয়ে এনেছে?
সোশ্যাল মিডিয়ার কথা ধরুন।
একদিকে এটি যোগাযোগের একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানুষকে একত্রিত করে।
আবার, এর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষে মানুষে বাড়ছে বিচ্ছিন্নতা, বাড়ছে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা।
এছাড়াও, এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে ভুয়া খবর এবং বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের বিস্তার সমাজে অস্থিরতা তৈরি করছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
AI প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করতে পারে, কিন্তু এর অপব্যবহারের ফলে তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন, চাকরির সুযোগ কমে যাওয়া, এবং পক্ষপাতদুষ্টতা বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলোও দেখা দিতে পারে।
প্রযুক্তির এই উত্থান এবং এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করার সময় আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তি কোনো নিছক ‘নিরপেক্ষ’ বিষয় নয়।
প্রযুক্তি তৈরি, নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে ক্ষমতা, শ্রেণি, এবং লিঙ্গ-বৈষম্যের প্রভাব থাকে।
প্রযুক্তি-বিশ্বে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রায়ই শ্বেতাঙ্গ পুরুষ হয়ে থাকেন, এবং তাদের তৈরি করা প্রযুক্তি সমাজের বিশেষ কিছু অংশের স্বার্থ রক্ষা করে।
সুতরাং, ‘নার্ড’ বা প্রযুক্তি-পাগলদের সাফল্য এবং তাদের প্রযুক্তির জয়জয়কার সবসময় সমাজের জন্য উপকারী নাও হতে পারে।
প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে এবং এর ভালো-মন্দ দিকগুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এই নিবন্ধটি আল জাজিরায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে, যেখানে লেখক প্রযুক্তি জগতের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ক্ষমতা এবং তাদের প্রযুক্তির সমাজের ওপর প্রভাব সম্পর্কে নিজস্ব মতামত দিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা