ইতালির এক সমকামী দম্পতি, যারা সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, এখন দেশে ফিরতে চরম উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কারণ ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সরকার ‘প্রজনন পর্যটন’-এর বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে।
নতুন এই আইনের কারণে তাদের কারাদণ্ড ও মোটা অঙ্কের জরিমানার শিকার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
ডিসেম্বরের শুরুতে প্রণীত এই আইন অনুযায়ী, যারা বিদেশে সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান নিতে চান, তাদের অপরাধীর তালিকায় ফেলা হবে। এমনকি তাদের সঙ্গে জঙ্গি, শিশু নির্যাতনকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের একই সারিতে গণ্য করা হবে।
এই আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৬ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ ইউরোর (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ কোটি থেকে ১১ কোটি টাকা) জরিমানা হতে পারে।
দম্পতির আইনজীবী জিয়ান্নি বাল্দিনি জানান, তাদের সন্তানটি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সান দিয়েগো, ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, “তারা ইতালিতে ফিরতে খুবই উদ্বিগ্ন, কারণ তাদের জেল ও জরিমানার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সম্ভাবনা বিবেচনা করছেন।”
মেলোনির নেতৃত্বাধীন চরম ডানপন্থী দল ‘ব্রাদার্স অফ ইতালি’ দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশ থেকে সারোগেসি (surrogacy) চাওয়ার বিষয়টিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে আসছিল।
অক্টোবরে আইনটি পাস হওয়ার পর মেলোনি বলেছিলেন, “প্রজনন পর্যটনে এই অমানবিক চর্চা” বন্ধ করতে এই আইনের প্রয়োজন।
ইতালিতে আন্তর্জাতিক এই নিষেধাজ্ঞার আগে, প্রায় ২৫০ জন ইতালীয় দম্পতি— যাদের অধিকাংশই স্বাস্থ্যগত কারণে সারোগেসির আশ্রয় নিতেন—বিদেশ থেকে এই পরিষেবা নিতেন।
সারোগেসি বিশ্বের ৬৬টি দেশে বৈধ এবং নিয়ন্ত্রিত।
তবে, বেশিরভাগ ইতালীয় দম্পতি যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার মত দেশে যান, যেখানে সন্তানের জন্ম সনদে সারোগেসি’র বিষয়টি উল্লেখ করা হয় না এবং তাদের সন্তান তাৎক্ষণিকভাবে মার্কিন বা কানাডার নাগরিকত্ব লাভ করতে পারে।
বাল্দিনির ধারণা, এই আইনের কারণে হয়তো বর্তমানে কয়েক ডজন শিশু বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা জানি না কতজন দম্পতি বর্তমানে এমন পরিস্থিতিতে আছেন, তবে অতীতে আমি যাদের সাহায্য করেছি, তাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা ভয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না।”
সান দিয়েগোর ওই দম্পতি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত।
তাই তারা চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতে পারেন।
তবে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে এলজিবিটিকিউ+ (LGBTQ+) পরিবারগুলোর প্রতি সেখানকার পরিবেশ কেমন হবে, তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন।
বিশেষ করে, যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করেন, তাহলে তাদের সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
নতুন এই আইনটি কার্যকর হওয়ার আগে যদি কেউ সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান ধারণ করে থাকেন, তবে তার ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না।
কিন্তু বর্তমানে যেহেতু তাদের সন্তানের জন্ম হয়ে গেছে, তাই ইতালিতে ফিরলে ওই দম্পতি বিচারের ঝুঁকিতে পড়বেন।
বাল্দিনি বলেন, ইতালিতে একটি বিচার প্রক্রিয়া তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।
কারণ এতে তাদের সন্তানের বিষয়টি সবার সামনে চলে আসবে।
বাল্দিনি আরও জানান, তিনি এই মামলা ইতালির সর্বোচ্চ আদালতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন এবং যুক্তি দেবেন যে, এই আইনটি অসাংবিধানিক।
কারণ এটি “ডাবল জিওপার্ডি”-র নীতি লঙ্ঘন করে।
অর্থাৎ, যে কাজটি যে দেশে অপরাধ নয়, সেটির জন্য অন্য কোনো দেশে শাস্তি দেওয়া যায় না।
এই আইনের একটি উদ্দেশ্য হলো, সারোগেসির জন্য বিশ্বের দরিদ্র নারীদের শোষণ বন্ধ করা।
বাল্দিনি বলেন, “অবশ্যই কিছু নারী শোষিত হন, তবে এটি এমন দেশগুলোতে ঘটে যেখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
ইতালি ক্যালিফোর্নিয়ার সারোগেট মায়েরা শোষিত হচ্ছেন, এমনটা বলতে পারে না, কারণ ক্যালিফোর্নিয়ায় এটি সম্পূর্ণ বৈধ।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান