আলজেরিয়ার নারী বক্সার ইমান খেলিফ, যিনি প্যারিস অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে পুনরায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনাকে তিনি গুরুত্ব দেন না।
প্যারিস অলিম্পিকে ইমান ৬6 কেজি ওজন শ্রেণিতে স্বর্ণপদক জেতার পর অনলাইনে তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য শুরু হয়। কিছু মানুষ, যারা ভুল তথ্য দিয়ে প্রভাবিত হয়েছিলেন, তারা দাবি করেন, ইমান একজন পুরুষ। ইতালির বক্সার অ্যাঞ্জেলা ক্যারিনিকে মাত্র ৪৬ সেকেন্ডে পরাজিত করার পরেই এই বিতর্ক শুরু হয়।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ইমান খেলিফ জানান, প্যারিস অলিম্পিকের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা ঘটেছিল, তা তাকে বেশ shocked করেছিল। তিনি বলেন, “যখন দেখলাম বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, বিখ্যাত ব্যক্তি এবং সাবেক ক্রীড়াবিদ, কোনো তথ্য যাচাই না করে আমার সম্পর্কে কথা বলছেন, তখন আমি বিস্মিত হয়েছি। তারা কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য ছাড়াই কথা বলছিলেন। এটা আমাকে কষ্ট দিয়েছে।”
ইমান আরও বলেন, “আমি দেখেছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষজন কোনো বিশ্বাসযোগ্য সূত্র ছাড়াই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছে।”
ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি প্রমাণ ছাড়াই ইমানকে একজন ‘রূপান্তরিত’ (transgender) খেলোয়াড় হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা এই বিতর্কে আরও ইন্ধন জুগিয়েছে। ট্রাম্প সম্প্রতি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে স্কুল এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডার নারীদের নারী ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গত বছরের প্যারিস অলিম্পিকে একজন পুরুষ বক্সার কীভাবে নারীদের স্বর্ণপদক ছিনিয়ে নিয়েছিল, তা কে ভুলতে পারে।”
তবে ট্রাম্পের মন্তব্যে ভীত নন ইমান। তিনি আত্মবিশ্বাসী যে, তিনি আবারও অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিততে পারবেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রান্সজেন্ডার নীতি নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আমি ট্রান্সজেন্ডার নই। এটা আমাকে উদ্বিগ্ন করে না, ভীতও করে না। আমি নিজেকে অন্য মেয়েদের মতোই একজন মেয়ে হিসেবে দেখি। আমি একজন মেয়ে হিসেবে জন্ম নিয়েছি, বেড়ে উঠেছি এবং জীবন যাপন করছি।”
প্যারিসে সাফল্যের আগে, ২০২৩ সালে ইমানকে আন্তর্জাতিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ) আয়োজিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, আইবিএ-র রাশিয়ান সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কারণে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) এই সংস্থার স্বীকৃতি বাতিল করেছে।
আইবিএ দাবি করেছিল, জেন্ডার যাচাই পরীক্ষায় ইমানের ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক সুবিধা’ পাওয়া গেছে, তবে তারা এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। এরপর আইবিএ ইমান এবং আইওসির বিরুদ্ধে মামলা করে। আইওসি এটিকে আইবিএর ‘তাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
বিদায়ী আইওসি প্রেসিডেন্ট থমাস বাখ ইমানের পক্ষ নিয়েছিলেন। তিনি সিএনএন স্পোর্টসকে জানান, এই বিতর্ক ছিল মূলত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন একটি ভুল তথ্য প্রচারের অংশ। বাখ বলেন, “এমন একটা ধারণা তৈরি করা হয়েছিল যেন এই দুই বক্সার (ইমান খেলিফ এবং অন্যজন) ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদ। তারা তা নন।
তারা নারী হিসেবে জন্ম নিয়েছেন, নারী হিসেবে বেড়ে উঠেছেন এবং নারী হিসেবেই প্রতিযোগিতা করেছেন। তারা হেরেছেন, জিতেছেন। এমনকি কোনো বিতর্ক ছাড়াই টোকিও অলিম্পিকেও অংশ নিয়েছেন।”
বিশ্বজুড়ে এমন বিতর্কের মধ্যেও ইমান দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। তবে তিনি জানান, এই বিতর্কের কারণে তার পরিবারের ওপর যে প্রভাব পড়েছিল, তা দেখা কঠিন ছিল। ইমান বলেন, “আমার মা পর্যন্ত গভীর দুঃখ পেয়েছিলেন।
তিনি প্রায় প্রতিদিনই হাসপাতালে যেতেন। আমার আত্মীয়-স্বজন এবং পুরো আলজেরীয় জাতি এই পরিস্থিতির চাপ অনুভব করেছে। এটা শুধু খেলা বা প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল না, বরং একটি বড় ধরনের মিডিয়া প্রচারে রূপ নিয়েছিল।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন