মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসকে ৬ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই রায় মুক্তভাবে কথা বলার অধিকারের ওপর একটি বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
টেক্সাস-ভিত্তিক তেল ও গ্যাস পাইপলাইন কোম্পানি, এনার্জি ট্রান্সফার, গ্রিনপিসের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে এবং এই রায়ের মাধ্যমে তাদের জয় হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় প্রায় এক দশক আগে, যখন আদিবাসী উপজাতি স্ট্যান্ডিং রক সিউক্স-এর নেতৃত্বে ড্যাকোটা অ্যাক্সেস পাইপলাইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়। পরিবেশ রক্ষার দাবিতে হওয়া এই আন্দোলনে গ্রিনপিসও সমর্থন জানিয়েছিল।
উত্তর ডাকোটার একটি জুরি বোর্ড গ্রিনপিসকে তাদের কার্যক্রমের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বলে, যার মধ্যে ছিল অনধিকার প্রবেশ, উপদ্রব সৃষ্টি, ষড়যন্ত্র এবং সম্পত্তির অধিকার হরণ।
আদালতের এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এনার্জি ট্রান্সফার এক বিবৃতিতে জানায়, তারা আদালতের এই সিদ্ধান্তে আনন্দিত। তাদের মতে, গ্রিনপিসকে তাদের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
অন্যদিকে, গ্রিনপিস এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে। গ্রিনপিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সত্য তাদের সঙ্গে আছে।
মামলার শুনানিতে উঠে আসে, ২০১৬ সালে ড্যাকোটা অ্যাক্সেস পাইপলাইন নির্মাণের বিরুদ্ধে স্ট্যান্ডিং রক সিউক্স উপজাতি প্রতিবাদ শুরু করে। তারা এই পাইপলাইনটিকে তাদের পবিত্র ভূমির জন্য হুমকি হিসেবে দেখেছিল।
গ্রিনপিসসহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংগঠন এই আন্দোলনে সমর্থন যোগায়। যদিও প্রতিবাদ সত্ত্বেও ২০১৭ সালে পাইপলাইনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার রায় পরিবেশ আন্দোলন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। অনেকেই মনে করছেন, এই ধরনের রায় ভবিষ্যতে প্রতিবাদকারীদের কণ্ঠরোধ করতে পারে।
গ্রিনপিসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল, আদিবাসী উপজাতিদের প্রতিবাদে উসকানি দেওয়া এবং পাইপলাইন প্রকল্পের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো।
আদালতের রায়ে গ্রিনপিসকে ৬ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার সমান। গ্রিনপিস জানিয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসেও এনার্জি ট্রান্সফারের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেছে।
এই মামলার রায় জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর নতুন করে আলোকপাত করেছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা