হলিউডের তারকারা কি এবার দেশ ছাড়ছেন? ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের আশঙ্কায় অনেকে অন্য দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবারও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দেশ ছাড়ার কথা ভাবছেন।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেলিব্রেটি রয়েছেন। অনেকে হয়তো মজা করে বা পরিস্থিতি হালকাভাবে নিতে এমনটা বলছেন, আবার কারও কারও মধ্যে উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত জয়ের পর অনেকে দ্রুত দেশ ছাড়ার কথা ভেবেছিলেন, তবে পরবর্তীতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় তারা আর যাননি।
সেই সময় অনেক তারকা বিভিন্ন প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। শোনা যাচ্ছে, জনপ্রিয় গায়িকা কোর্টনি লাভ যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব চেয়েছেন।
কমেডিয়ান ও উপস্থাপিকা অ্যালেন ডি জেনারেস এবং তার স্ত্রী পোর্শিয়া ডি রসি ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন এবং সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য তাদের শেষ মার্কিন সম্পত্তিও বিক্রি করে দিয়েছেন। অভিনেতা রায়ান গসলিং, ইভা মেন্ডেস এবং তাদের দুই সন্তান গ্রীষ্মকালে লন্ডনে চলে গিয়েছেন।
অভিনেত্রী আমেরিকা ফেরেরাও নাকি সেখানে স্কুল খুঁজছেন। এছাড়া, অভিনেত্রী রোজie ও’ডনেল তার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের কারণে আয়ারল্যান্ডে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সেখানকার নাগরিকত্ব খুঁজছেন। যদিও অভিনেত্রী ইভা লঙ্গোরিয়া গত বছর জোর দিয়েছিলেন যে তিনি রাজনৈতিক কারণে স্পেন ও মেক্সিকোতে যাননি।
যদিও হাতে গোনা কয়েকজন তারকার দেশত্যাগের সিদ্ধান্তে বিশাল কোনো পরিবর্তন আসবে না, তবে ট্রাম্পের সম্ভাব্য দ্বিতীয় মেয়াদে অনেক তারকার নীরবতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ২০১৬ সালের নির্বাচনের পর অনেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে মুখ খুলেছিলেন, কিন্তু এবার তাদের কণ্ঠ অনেকটাই মৃদু।
এর কারণ হিসেবে অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের বিজয় অপ্রত্যাশিত ছিল না, বরং এটি এখন একটি বাস্তবতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেলিব্রেটিদের মূল কাজ হলো পরিচিতি বজায় রাখা, কিন্তু তাদের একটি ছোট অংশ নীরবে দেশ ছাড়ছেন।
শুধু তারকারাই নন, ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা আমেরিকানদের সংখ্যাও প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। যাদের আর্থিক সঙ্গতি আছে, তাদের পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ।
তবে, সাধারণ মানুষের জন্য পরিস্থিতি ভিন্ন। ট্রাম্প প্রশাসন সরকার এবং দেশকে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে নারীদের অধিকার, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষ করে যারা ভিন্ন জীবন ধারণ করেন, তাদের অধিকার হরণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, হলিউডের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছেন, যা অনেককে হতাশ করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে, দেশ ছেড়ে যাওয়াটা তাদের কাছে অনেকটা বিলাসিতার মতো। তবে, এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, এই তারকারা সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন। সব মিলিয়ে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেকের মনেই ভীতি তৈরি করেছে, যার ফলস্বরূপ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের নিরাপত্তা এবং অধিকারের জন্য অন্য দেশে পাড়ি জমাতে শুরু করেছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান