বৃদ্ধ নেড জনসন, বয়স ৮২ বছর, আমেরিকার সিয়াটলের বাসিন্দা। তিনি প্রমাণ করতে বাধ্য হয়েছেন যে তিনি এখনও জীবিত, যদিও দেশটির সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসন (Social Security Administration – SSA) তাকে মৃত ঘোষণা করেছিল।
এই ঘটনার কারণে তিনি বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক কঠিন লড়াইয়ে লিপ্ত ছিলেন।
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন এসএসএ-কর্তৃপক্ষ গত মাসে নেড জনসনকে মৃত ঘোষণা করে। এর ফলস্বরূপ, তার মাসিক সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার অর্থ বন্ধ হয়ে যায় এবং পূর্বে পরিশোধিত কিছু অর্থও ফেরত চেয়ে পাঠানো হয়।
শুধু তাই নয়, তার স্বাস্থ্য বীমা এবং চিকিৎসা সুবিধাও বাতিল করা হয়। নেড এবং তার স্ত্রী পামেলা, দুজনেই এই অপ্রত্যাশিত ঘটনার শিকার হন।
তাদের ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানানো হয় যে নেড-এর “মৃত্যু” হয়েছে। এরপর, তাদের ব্যাংক থেকে একটি শোকবার্তাও পাঠানো হয়।
পামেলা জানান, “একদিন সকালে নাস্তার টেবিলে বসে আমি যখন কফি পান করছিলাম, তখন দেখি আমার পাশে বসা নেড-এর উদ্দেশ্যে শোকবার্তা এসেছে।” এই ঘটনা তাদের কাছে ছিল অনেকটা অপ্রত্যাশিত এবং হাস্যকর।
কিন্তু এরপর যখন তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ অদৃশ্য হতে শুরু করে, তখন তারা বুঝতে পারেন যে এটি একটি গুরুতর সমস্যা।
নেড জনসন একজন উদ্যমী মানুষ ছিলেন এবং সারা জীবন ব্যবসা ও সমুদ্র ভ্রমণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি জানান, এসএসএ-এর কর্মকর্তাদের ভুল বোঝাবুঝির কারণে তার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
তিনি এখন পর্যন্ত প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে তিনি সত্যিই জীবিত আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই অভিযোগ করেন যে, বহু মৃত ব্যক্তি এখনও সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা পাচ্ছেন। অনেকের ধারণা, সম্ভবত এসএসএ-এর এই ভুলের পেছনে ট্রাম্পের এমন ধারণার প্রভাব থাকতে পারে।
জানা যায়, এসএসএ-এর ভুলের শিকার হওয়া নেড জনসন-এর মতো মানুষের সংখ্যা বছরে প্রায় ৯ হাজারের মতো। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর খবর এসএসএ-তে নথিভুক্ত করা হয়।
এর মধ্যে খুব সামান্য সংখ্যক মানুষ, যাদেরকে ভুলক্রমে মৃত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই সামান্য সংখ্যাটিও ভুক্তভোগীদের জন্য বিশাল দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর, নেড জনসন অবশেষে তার জীবিত থাকার প্রমাণ দিতে সক্ষম হন। তিনি সিয়াটলের এসএসএ অফিসে প্রায় আট ঘণ্টা অপেক্ষা করেন এবং নিজের পাসপোর্ট ও ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র দেখিয়ে প্রমাণ করেন যে তিনি এখনও জীবিত।
এরপর তিনি তার প্রাপ্য সুবিধাগুলো ফিরে পান।
তবে, নেড জনসন এখনও উদ্বিগ্ন। তিনি আশঙ্কা করছেন, তার এই “মৃত্যু”র খবর অন্য কোথাও, যেমন তার ক্রেডিট রিপোর্টে, রয়ে যেতে পারে। তার মতে, “সামাজিক নিরাপত্তা সিস্টেমে কেউ মৃত ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার ক্রেডিট স্কোর শূন্য হয়ে যায়।”
নেড জনসন আরও একটি উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, যারা শারীরিকভাবে অক্ষম বা বয়স্ক এবং এসএসএ অফিসে যাওয়া যাদের জন্য কঠিন, তাদের ক্ষেত্রে এমন ভুল হলে তারা চরম দুর্ভোগের শিকার হবেন।
অফিসের কর্মী সংকট এবং অনলাইন পরিষেবার সীমাবদ্ধতার কারণে এই ধরনের সমস্যা আরও বাড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন