মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যবসা-বা-ণিজ্যে নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। উভয় পক্ষ একে অপরের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ায় অনেক কোম্পানি তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছে।
এর ফলে, পণ্যের দাম বাড়তে পারে এবং ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা হয় যখন যুক্তরাষ্ট্র ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির উপর শুল্ক বৃদ্ধি করে। এর জবাবে ইইউ তাদের দেশের কিছু পণ্যের উপর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেয়।
পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নেয়, যখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের উপর ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।
এই শুল্কের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হতে পারে এমন একটি ব্যবসার উদাহরণ হলো ইতালীয় ‘লিমোঞ্চেলো’ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘ফ্যাব্রিজিয়া স্পিরিটস’। কোম্পানিটি তাদের পানীয় তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ইতালির সিসিলি থেকে আমদানি করে থাকে।
সম্প্রতি তারা প্রায় $35,000 (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা) মূল্যের স্পার্কলিং ওয়াইন আমদানি করার চুক্তি করেছে। কিন্তু শুল্ক আরোপের ফলে তাদের $70,000 (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা) অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে, কোম্পানিটি হয় পণ্যের চালান ফেরত পাঠাতে পারে, অথবা অন্য কোনো দেশে এটি খালাস করার চেষ্টা করতে পারে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব শুধু একটি কোম্পানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইন প্রস্তুতকারকদেরও এর কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়াইন প্রস্তুতকারকদের সংগঠন ‘ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাসোসিয়েশন অফ ওয়াইনগ্র্যাপ গ্রোয়ার্স’-এর প্রধান ন্যাটালি কলিন্স জানিয়েছেন, কানাডায় ওয়াইন রপ্তানি কমে যাওয়ায় অনেক চুক্তি বাতিল হয়ে যাচ্ছে।
কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইন রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার, যা দেশটির মোট রপ্তানির প্রায় ৩৫ শতাংশ।
এই পরিস্থিতিতে ভোক্তারাও তাদের পছন্দের পানীয় কেনা থেকে বিরত থাকতে পারেন। শুল্কের কারণে দাম বাড়লে তারা হয়তো কম দামের বিকল্প খুঁজবেন অথবা রেস্তোরাঁয় যাওয়া কমিয়ে দেবেন।
তবে, কেউ কেউ মনে করছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের হুমকি আসলে দর কষাকষির একটি কৌশল হতে পারে। আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে দ্রুতই এই বাণিজ্য যুদ্ধের অবসান হতে পারে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয় এবং ব্যবসা-বা-ণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন