ফ্রান্সের এক জন বিতর্কিত সার্জন, জোয়েল লে স্কোয়ার্নেক, যিনি শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত, অবশেষে তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ স্বীকার করেছেন। এই ঘটনার জেরে এখন তদন্তকারীরা আরও ভুক্তভোগীর সন্ধান করছেন।
জানা গেছে, এই সার্জন ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে পশ্চিম ফ্রান্স ও ব্রিটানির বিভিন্ন ক্লিনিকে আসা ২৯৯ জন রোগীর ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছিলেন। এদের অধিকাংশই ছিল নাবালক।
শুরুর দিকে যদিও তিনি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন, কিন্তু বিচারের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তিনি তাঁর অপরাধ স্বীকার করেন। তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন, অভিযুক্তের হাতে লেখা একটি তালিকা থেকে জানা গেছে, ৩০০ জনের বেশি ব্যক্তির ওপর এই নির্যাতন চালানো হয়েছে।
আইনজীবী আরও জানান, অভিযুক্ত বিচারকের কাছে বলেছেন, “আমার সত্য বলার একটা দায়িত্ব আছে।”
ফরাসি কৌঁসুলিরা এখন একটি নতুন তদন্ত শুরু করেছেন, যাতে লে স্কোয়ার্নেকের লেখায় উল্লিখিত অন্যান্য ভুক্তভোগীদের চিহ্নিত করা যায়। তাদের ধারণা, এই সার্জন ‘আমার শিশু যৌন অত্যাচারের চিঠি’ নামে একটি নথি তৈরি করেছিলেন।
এই ঘটনার আগে, ১৫৮ জন পুরুষ এবং ১৪১ জন মহিলা ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়স ছিল ১৫ বছরের কম।
আদালতকে জানানো হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার অথবা অন্য কোনো চিকিৎসার সময় যখন রোগীরা অচেতন থাকত, সেই সুযোগে এই নির্যাতন চালানো হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের আইনজীবী, ফ্রেডেরিক গিফার্ড, এই স্বীকারোক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর মতে, এই ঘটনার মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।
উল্লেখ্য, এর আগেও লে স্কোয়ার্নেকের বিরুদ্ধে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। ২০২০ সাল থেকে তিনি ১৫ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
সেই মামলায় তাঁর বাড়ি থেকে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ছবি এবং ভিডিও-সহ আরও অনেক নথি উদ্ধার করা হয়েছিল।
আদালতে এখন এটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে যে, কীভাবে ২০০৫ সালে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ছবি রাখার দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার পরেও, লে স্কোয়ার্নেককে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি জানত, তবুও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ভুক্তভোগীদের পক্ষের আইনজীবী ফ্রান্সেসকা সাত্তা জানিয়েছেন, এই সার্জন ছিলেন “অত্যন্ত বিকৃত মানসিকতার”। তাঁর ধারণা, এই ঘটনার শিকার হওয়া রোগীর সংখ্যা ৪০০ পর্যন্ত হতে পারে।
তিনি আরও জানান, এই ঘটনার কারণে ভুক্তভোগীরা গভীর মানসিক কষ্টের মধ্যে রয়েছেন।
এই ঘটনার জেরে শিশুদের সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে জবাবদিহিতার বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান