সুদানের রাজধানী খার্তুমে দেশটির সামরিক বাহিনী ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছে। সম্প্রতি তারা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, যা ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে চলা গৃহযুদ্ধে সেনাবাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
খবর পাওয়া যাচ্ছে, সুদানের সেনাবাহিনী এবং তাদের সমর্থকরা এই বিজয় উদযাপন করছে।
তবে, রাজধানী খার্তুমের কিছু অংশে এখনো পর্যন্ত আধিপত্য বজায় রেখেছে দেশটির আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। গত বছর সেপ্টেম্বরে আরএসএফের বিরুদ্ধে বড় ধরনের পাল্টা আক্রমণ শুরু করার পর সেনাবাহিনীর জন্য এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজয়।
আরএসএফ অবশ্য দারফুরের পাঁচটি অঞ্চলের মধ্যে চারটি এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, যা ফ্রান্সের প্রায় সমান।
সামরিক বাহিনীর এই সাফল্যের কয়েক দিন আগে আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি ‘হেমেটি’ নামেই পরিচিত, এক ভিডিও বার্তায় তার যোদ্ধাদের প্রাসাদ না ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর সেখানকার সাধারণ মানুষজন তাদের স্বাগত জানাচ্ছে, যদিও আরএসএফের সেনা প্রত্যাহারের পর সেনাবাহিনীর সঙ্গে থাকা মিলিশিয়াদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের কিছু খবর পাওয়া গেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গত বছরের জুন মাস পর্যন্ত আরএসএফ খার্তুমে অন্তত ১০ হাজার মানুষকে আটক করেছে।
সেখানকার একজন বাসিন্দা ইউসুফ জানান, আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোতে তারা মানুষ হত্যা করে, নারীদের ধর্ষণ করে এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সেনাবাহিনী আসার পর সেখানকার মানুষজন নিরাপদ বোধ করে এবং শিশুদের মধ্যেও আনন্দের ঢেউ লাগে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসায় সুদানে কার্যত বিভাজন আরো বাড়ছে।
আরএসএফ এরই মধ্যে একটি সমান্তরাল সরকার পরিচালনা করছে এবং তারা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর আল-মালিহা দখল করে নিয়েছে। তবে, উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের দখলের জন্য আরএসএফের লড়াই এখনো চলছে।
কারণ সেখানে সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটি রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সুদানের বিশেষজ্ঞ শারাত শ্রীনিবাসন মনে করেন, সুদানে ‘লিবিয়ার মতো পরিস্থিতি’ তৈরি হতে পারে। যেখানে সশস্ত্র গোষ্ঠী ও মিলিশিয়াদের সঙ্গে দুটি কর্তৃপক্ষের বিভাজন দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এল-ফাশের বাদে ভৌগোলিক বিভাজন আরো বাড়ছে। কার্যত নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে আরএসএফকে অবশ্যই এল-ফাশেরের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে, যা এখনো অনিশ্চিত।
সেনাবাহিনী আরএসএফের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করতে রাজি নয় এবং তারা পুরো দেশ পুনর্দখলের পরিকল্পনা করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আরএসএফ কূটনীতিকে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। গত বছর জানুয়ারিতে হেমেটি ‘তাকাদুম’ নামের একটি জোটের সঙ্গে নীতিগত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।
এরপর তিনি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সফর করেন, যেখানে তার বাহিনী সুদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎপাদন কেন্দ্র গেজিরা রাজ্যে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা, হত্যা ও লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছিল।
উভয় পক্ষই সম্প্রতি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যার ফলে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে কোর্দোফান ও দারফুর অঞ্চলে সংঘর্ষ আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এছাড়া, অত্যাধুনিক অস্ত্রের কারণে খার্তুমেও সংঘাত বাড়তে পারে। প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ পুনরুদ্ধারের কিছুক্ষণ পরেই, সেখানে ড্রোন হামলায় তিনজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
চলমান সংঘাত সুদানের বিশাল অঞ্চলকে আরও অস্থির করে তুলতে পারে। এই যুদ্ধ এরই মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট তৈরি করেছে।
এতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, অনেকে নিখোঁজ এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে কয়েক মিলিয়ন মানুষ।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা