গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন পরিকল্পনা নিয়ে হামাস, জবরদখল চালিয়ে যাওয়ার ইসরায়েলি অঙ্গীকার।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির একটি নতুন প্রস্তাব বিবেচনা করছে হামাস। একইসঙ্গে, জিম্মিদের মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ভূমি দখলের অঙ্গীকার করেছে ইসরায়েল।
শুক্রবার হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে। উইটকফ যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপটি এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
হামাস এর আগে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সময়সীমা মেনে চলতে চেয়েছিল, যেখানে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি হবে। তবে ইসরায়েল প্রথম ধাপ বাড়াতে চাইছে।
হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা খালেদ মেশাল বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেন, উইটকফের পরিকল্পনা ব্যবহার করে ইসরায়েল হামাসকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে। তারা চাইছে, দ্বিতীয় ধাপের অঙ্গীকার পূরণ না করেই প্রথম ধাপের চুক্তি অনুযায়ী জিম্মিদের ফিরিয়ে নিতে।
দ্বিতীয় ধাপে গাজায় স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করার কথা ছিল।
গত মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েল গাজায় বিমান ও স্থল হামলা জোরদার করেছে। হামাস নতুন শর্তে রাজি না হওয়ায় তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানায়।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা সামরিক অভিযান আরও তীব্র করবে এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চাপ বাড়াবে।
হামাস পরিচালিত গভার্নমেন্ট মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৬০০ জন নিহত এবং ১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
হামাস যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে রকেট হামলা চালায়, তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, বুধবার নিহত শিশুদের সংখ্যা গত এক বছরের মধ্যে একদিনে শিশুমৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে অভিযান শুরু করেছে। শুক্রবার রাফাহ পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়, বোমা হামলায় ১০০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
বাসিন্দাদের খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হচ্ছে, যেখানে খাবার বা আশ্রয়ের ব্যবস্থা নেই।
শুক্রবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সকে (আইডিএফ) নির্দেশ দিয়েছেন, হামাস জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত গাজার আরও বেশি এলাকা দখল করতে হবে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে দিতে হবে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, এই ভূমি দখল ‘স্থায়ী’ হবে।
গ্যালান্ট বলেন, এর মাধ্যমে ইসরায়েলি বসতি ও আইডিএফ সেনাদের সুরক্ষার জন্য গাজার চারপাশে নিরাপত্তা অঞ্চল তৈরি করা হবে এবং ইসরায়েল এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ স্থায়ীভাবে ধরে রাখবে। তিনি আরও যোগ করেন, ‘হামাস তাদের অস্বীকৃতি জানালে ইসরায়েল তাদের কাছ থেকে আরও বেশি ভূমি কেড়ে নেবে।’
প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সামরিক চাপের পাশাপাশি ‘বেসামরিক চাপ’ প্রয়োগ করা হবে, যার মধ্যে গাজার বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা থেকে বাসিন্দাদের স্বেচ্ছায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা অন্তর্ভুক্ত।
শুক্রবার হামাস তাদের বিবৃতিতে যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের দাবি জানিয়ে জানায়, তারা জিম্মিদের মুক্তি, যুদ্ধ বন্ধ এবং সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা চেয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী উইটকফের প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাসের হাতে বন্দী থাকা জীবিত কয়েকজন জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে এক মাসের জন্য ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি বাড়ানো হবে। একইসঙ্গে, ইসরায়েল গাজায় প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলমান মানবিক সহায়তা বন্ধের অবরোধও তুলে নেবে।
এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি পাসওভার উৎসবের শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে, যা মুসলিমদের পবিত্র মাস রমজান এবং ইহুদিদের ছুটির সময়কালে যুদ্ধ বন্ধ রাখবে এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ তৈরি করবে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ট জানিয়েছেন, ইসরায়েল উইটকফের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে জীবিত ও মৃত সকল জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং এর মধ্যে যুদ্ধবিরতি বজায় থাকবে।
গাজায় এখনো ৫৯ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম জীবিত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন