ব্রিটিশ-মিশরীয় মানবাধিকার কর্মী আলাা আবদেল-ফাত্তাহর মুক্তির দাবিতে আবারও অনশন ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছেন তাঁর মা, লেইলা সুয়েইফ। ছেলের মুক্তির দাবিতে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হলে এই মাসের শেষে তিনি আবার অনশন শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।
৬৮ বছর বয়সী সুয়েইফ বলেন, “আমি জানি, এই পদক্ষেপের অর্থ হলো আমার হয়তো এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ বাঁচার সম্ভাবনা থাকবে।”
গত বছর ২৯শে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া ১৫ দিনব্যাপী অনশন ধর্মঘটের সময় তিনি কেবল ভেষজ চা, ব্ল্যাক কফি এবং রিহাইড্রেশন সল্ট গ্রহণ করেছিলেন। এর ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তিনি লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁকে সতর্ক করে বলেছিলেন যে তিনি মৃত্যুর কাছাকাছি চলে এসেছেন। এমনকি তিনি মিশরের রাষ্ট্রদূতের কাছে তাঁর মেয়েদেরকে তাঁর মৃতদেহ কায়রোতে ফিরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য একটি চিঠি লিখেছিলেন, যেখানে তাঁর প্রয়াত স্বামীর সমাধিস্থলের কাছে তাঁকে দাফন করার কথা উল্লেখ করা হয়।
হাসপাতালে থাকাকালীন তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে ডাক্তাররা তাঁকে গ্লুকোজের স্যালাইন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং তাঁর ব্লাড সুগার লেভেল বাড়ানোর চেষ্টা করেন। ছেলের মুক্তির জন্য আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে তিনি দিনে ৩০০ ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য পরিপূরক গ্রহণ করতে রাজি হন।
এর আগে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সাথে আলাপের মাধ্যমে ফাত্তাহর মুক্তির বিষয়ে কথা বলেছিলেন। এই ফোনালাপটি ছিল পরিবারের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে একটি।
আশা করা হচ্ছে, আসন্ন রমজান মাসের শেষে ফাত্তাহকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। যদিও তিনি তাঁর পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ করেছেন, তবুও মিশরীয় কর্তৃপক্ষ তাঁর মামলার আগের দুই বছর আটক থাকার বিষয়টি বিবেচনায় না নেওয়ায় গত সেপ্টেম্বরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।
সুয়েইফ জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে, তবে ছেলের মুক্তির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। তিনি বলেন, “আমি এখন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি যে, যদি দ্রুত দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন না আসে, তাহলে আমি আগের মতো আবার অনশন শুরু করব।
২৫ তারিখে আমি আমার মেডিকেল টিমের সাথে দেখা করব, তাঁরা আমাকে এর ফল সম্পর্কে জানাবেন। তবে আমি মনে করি, আমি সে সম্পর্কে অবগত আছি।”
তাঁর এক মেয়ে সানায়া জানিয়েছেন, মায়ের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে, তবে তাঁর পেশি দুর্বল এবং গ্লুকোজের পরিমাণ কম। স্টারমারের ফোনালাপের পর থেকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সাথে যোগাযোগের সংখ্যা কমে গেছে এবং তিনি বিষয়টি কর্মকর্তাদের জানাতে একটি মিটিং করবেন।
এদিকে, মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে ফাত্তাহ নিজেও অনশন শুরু করেছেন। সম্প্রতি পরিবারের সদস্যরা তাঁর সাথে দেখা করেছেন।
ব্রিটিশ কূটনীতিকদের কনস্যুলার অ্যাক্সেস দেওয়ার জন্য তিনি আবেদন করেছেন, কিন্তু মিশর তাঁর ব্রিটিশ নাগরিকত্বকে স্বীকৃতি দিতে গড়িমসি করছে, যে কারণে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তাঁর সাথে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
সর্বশেষ, ২৬শে ফেব্রুয়ারি স্টারমার এমপিদের বলেন, “আমি এই ক্ষেত্রে তাঁর মুক্তির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব, প্রয়োজনে ফোন করব। আমি আগেও বিষয়টি উত্থাপন করেছি, আবারও করব। আমি পরিবারকে কথা দিয়েছি যে আমি তা করবই।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান